হুমায়ুন রশিদ

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১:৫৩ এএম

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী: একজন কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ ও সংসদের স্পীকার

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (১১ নভেম্বর ১৯২৮ - ১০ জুলাই ২০০১) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পীকার। তিনি ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের ৪১তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন, যা বাংলাদেশের জন্য এক অভূতপূর্ব সাফল্য ছিল।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণকারী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস ছিল সুনামগঞ্জ জেলার দরগাপাশা গ্রামে। তিনি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও আসামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং এরপর লন্ডনে আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। লন্ডনের ইনার টেম্পলের সদস্যপদ লাভের পাশাপাশি লন্ডন ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ম্যাসাচুসেটসের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি থেকেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

কূটনৈতিক জীবন:

১৯৫৩ সালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি রোম, বাগদাদ, প্যারিস, লিসবন, জাকার্তা এবং নতুন দিল্লীতে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে তিনি বিভিন্ন দেশের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর, তিনি জার্মানি, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৮৫-৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সম্মাননা ও পুরস্কার:

বিশ্ব শান্তিতে অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৪ সালে ‘মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। তিনি লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।

মৃত্যু:

২০০১ সালের ১০ জুলাই ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। তাকে সিলেটের শাহজালালের মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পীকার ছিলেন।
  • ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
  • মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার ও মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।