হুমায়ুন কবির: একজন ব্যক্তিত্বের বহুমুখী রূপ
হুমায়ুন কবির (২২ ফেব্রুয়ারী ১৯০৬ - ১৮ আগস্ট ১৯৬৯) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি ব্যক্তিত্ব যিনি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও দার্শনিকের ভূমিকায় সমানভাবে সফল ছিলেন। তাঁর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরের কোমরপুর গ্রামে। খান বাহাদুর কবিরুদ্দিন আহমদ ছিলেন তাঁর পিতা। তিনি ছাত্রজীবনেই অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন। ১৯২২ সালে নওগাঁ কে.ডি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে লেটারসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৮ সালে সরকারি বৃত্তি পেয়ে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সেটার কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩১ সালে দর্শন, ইতিহাস ও অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি.এ. অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক দক্ষতাও প্রমাণ করেন।
ভারতে ফিরে আসার পর তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হন, যার মধ্যে দুইবার শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, তিনি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সিভিল এভিয়েশনের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। তিনি রাজ্যসভা এবং লোকসভার সদস্যও ছিলেন।
হুমায়ুন কবির ছিলেন একজন প্রখ্যাত লেখক। তিনি কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, এবং অনুবাদসহ বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। ‘চতুরঙ্গ’ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে ‘নদী ও নারী’ উপন্যাসটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তিনি মৌলানা আবুল কালাম আজাদের আত্মজীবনী ‘ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
১৯৬৯ সালের ১৮ আগস্ট কলকাতায় হুমায়ুন কবিরের মৃত্যু হয়। তিনি তাঁর রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সাহিত্যিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।