হাফেজ কুতুব উদ্দিন: একজন সম্মানিত ইসলামি পন্ডিত ও শিক্ষাবিদ
হাফেজ মাওলানা কুতুব উদ্দিন ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ইসলামি পন্ডিত, মুহাদ্দিস এবং আরবি ভাষাবিদ। তিনি তার জীবনে শিক্ষা, ধর্মীয় প্রচার ও ব্যাংকিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
১৯৩৮ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সুফি মিয়াজি পাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন ছিলেন চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক এবং মাতার নাম রায়হানাহ বেগম। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা পিতা-মাতার কাছ থেকে গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে চুনতি হাকিমিয়া সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে দাখিল এবং ১৯৫৫ সালে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৭ সালে ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন এবং ১৯৫৯ সালে দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল শ্রেণীতে হাদিস বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
১৯৬০ সালে সাতকানিয়ার রসুলাবাদ সিনিয়র মাদরাসায় জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৭০-১৯৮০)। ১৯৮৭ সালে বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৮৯ সালে উপাধ্যক্ষ ও ১৯৯৭ সালে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০৩ সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরেও অবৈতনিকভাবে মাদ্রাসায় বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ পাঠদান করতেন। তিনি মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। উবায়দুল হকের মৃত্যুর পরে ২০০৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং ২০০৯ সাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বায়তুশ শরফের পীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লিখিত অবদান:
মাওলানা কুতুব উদ্দিন ছিলেন একজন কবি ও আবৃত্তিকার। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আরবি, উর্দু ও ফারসি ভাষায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছেন। তার লেখা ৮টি বই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। 'গুলেহায়ে আকিদত' নামক কাব্যগ্রন্থে ৫০০টি দুর্লভ কবিতা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মৃত্যু:
২০২০ সালের ২০ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও ছয় কন্যাকে রেখে গেছেন।
পুরস্কার:
তিনি তার সেবা জীবনে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন, যদিও সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য এখানে উল্লেখ নেই।