সিলেট সদর

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:৩৩ এএম

সিলেট সদর: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপরূপ সমন্বয়

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট জেলার সদর উপজেলা, সিলেট সদর, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নয়নের এক অপরূপ সমন্বয়। ৩০১.৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৪°৫২´ থেকে ২৫°০২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪০´ থেকে ৯১°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর, দক্ষিণে দক্ষিণ সুরমা, পূর্বে জৈন্তাপুর ও গোলাপগঞ্জ এবং পশ্চিমে ছাতক ও বিশ্বনাথ উপজেলা সিলেট সদরের সীমান্তবর্তী।

জনসংখ্যা ও গোষ্ঠীগত বৈচিত্র্য: ২০২৩ সালের হিসাবে সিলেট সদর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৮,২৯,১০৩; যার মধ্যে পুরুষ ৪,৩৬,৬৭৯ এবং মহিলা ৩,৯২,৪২৪। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। খাসিয়া ও মনিপুরী আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এ উপজেলায় বসবাস করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জলসম্পদ: সুরমা, কুশিয়ারা ও সিংড়া নদী সিলেট সদরের প্রধান জলাশয়। ডবু বিল, বাগোলা বিল ও পাতামোড়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন: ১৯৮৪ সালে সিলেট সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রত্নসম্পদ: শাহজালাল (রহ)-এর মাযার, গড়দোয়ার নবাবী মসজিদ, বিশ্বম্ভর আখড়ার কষ্টি পাথরের মূর্তি, শাহী ঈদগাহের শিলালিপি, ক্রীন ব্রিজ ইত্যাদি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সিলেট সদর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিটি হাসপাতাল, সিলেট বিমানবন্দর, লালটিলা, উরিয়াটিলা, মালনীছড়া চা বাগান, টুলটিকর, জিন্দাবাজার পুলিশ লাইন, জালালাবাদ প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং বিভিন্ন স্থানে গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উপজেলায় ৩৭৫টি মসজিদ, ১২টি মন্দির, ২টি গির্জা, ২টি মঠ এবং ৬টি মাযার রয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ)-এর মাযার এর গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সিলেট সদরের শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য। ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ), ৪টি মেডিকেল কলেজ, ৩টি কারিগরি কলেজ, ৭টি কলেজ, ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬টি কমিউনিটি বিদ্যালয় ইত্যাদি রয়েছে।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী: বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকা সিলেট সদর থেকে প্রকাশিত হয়।

দর্শনীয় স্থান: হযরত শাহজালালের (রহ) মাযার, হযরত শাহ পরানের (রহ) মাযার, মালনীছড়া চা বাগান, এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান।

অর্থনীতি: কৃষি, অকৃষি শ্রমিক, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগ, চাকরি, নির্মাণ, ধর্মীয় সেবা, রেমিটেন্স ইত্যাদি আয়ের প্রধান উৎস। চা, পান, কমলালেবু, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রধান রপ্তানিদ্রব্য।

যোগাযোগ: পাকা, আধা-পাকা ও কাঁচা রাস্তা, রেলপথ এবং বিমানবন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করে।

স্বাস্থ্য সেবা: ৫টি হাসপাতাল, ৭টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২২টি ক্লিনিক এবং ৫টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।

এনজিও: ব্র্যাক, কেয়ার, আশা, সেভ দ্য চিলড্রেন প্রভৃতি এনজিও সিলেট সদরে কাজ করে।

উপসংহার: সিলেট সদর উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • সিলেট সদর উপজেলার আয়তন ৩০১.৮০ বর্গ কিলোমিটার।
  • জনসংখ্যা প্রায় ৮,২৯,১০৩।
  • ১৯৮৪ সালে থানা থেকে উপজেলায় রূপান্তর।
  • শাহজালাল (রহ) এর মাযার সিলেট সদরের প্রধান দর্শনীয় স্থান।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।