বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ও বিবর্তন
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সমৃদ্ধ ও বহুমুখী। কালক্রমে এর বিকাশ, বিভিন্ন ধারা, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান, উল্লেখযোগ্য ঘটনা, স্থান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
- *প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০):** বাংলা ভাষার উৎপত্তি প্রাকৃত ভাষা থেকে। চর্যাপদ (৭ম-১২শ শতক) বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন, যা বৌদ্ধ সহজিয়াদের ধর্মতত্ত্ব ও সাধন-ভজনমূলক। লুইপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা, শবরপা প্রমুখ ছিলেন চর্যাপদের রচয়িতা।
- *মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০):** এ যুগে বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গল সাহিত্য ও অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। বড়ু চন্ডীদাস (১৪শ শতক) প্রথম উল্লেখযোগ্য কবি, যিনি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়বিষয়ক নাটগীতিকাব্য রচনা করেন। কৃত্তিবাস ওঝা (১৫শ শতক) বাংলা ভাষায় প্রথম ও সর্বাধিক জনপ্রিয় রামায়ণ রচনা করেন। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী (১৬শ শতক) রচিত চন্ডীমঙ্গল সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত মঙ্গলকাব্য। এ যুগে মুসলমান কবিদেরও উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল, যেমন শাহ মুহম্মদ সগীরের ইউসুফ-জুলেখা ও আলাওলের পদ্মাবতী।
- *আধুনিক যুগ (১৮০০-):** আধুনিক যুগের সূচনায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। উইলিয়াম কেরী বাংলা গদ্যচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) বাংলা গদ্যসাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) বাংলা গদ্যকে সর্বপ্রকার ভাব প্রকাশের উপযোগী করে তোলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) বাংলা কাব্যে বিপ্লব ঘটান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) বাংলা সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রেই অনন্যসাধারণ অবদান রেখেছেন।
- *রবীন্দ্রোত্তর পর্ব (১৯৩০-১৯৪৭) ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা সাহিত্য:** এই পর্বে জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ প্রতিভাবান সাহিত্যিকদের আবির্ভাব ঘটে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক বৈষম্য, জাতীয়তাবাদ, মানবতাবাদ প্রভৃতি বিষয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে।
Key InformationList:
- চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
- মধ্যযুগে বৈষ্ণব, মঙ্গল ও অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ।
- আধুনিক যুগে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অবদান।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একচ্ছত্র অধিপতি।
- স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব।