সাপাহার: নওগাঁ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত সাপাহার উপজেলা অঞ্চলটির ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, জনসংখ্যাতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন:
সাপাহার উপজেলা ২৪৪.৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি ২৫°০১´ থেকে ২৫°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৬´ থেকে ৮৮°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে পোরশা উপজেলা, পূর্বে পত্নীতলা উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানা সাপাহারকে ঘিরে রেখেছে। পূনর্ভবা নদী এবং জবাই বিল এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সাপাহারের জনসংখ্যা ১৬১,৭৯২ জন। পুরুষ ৮১,৩০৪ জন এবং মহিলা ৮০,৪৮৮ জন। ধর্মীয়ভাবে, এখানে ১,৫০,৮৮২ জন মুসলিম, ৭,৮৭৭ জন হিন্দু, ১ জন বৌদ্ধ, ৭৩৯ জন খ্রিস্টান এবং ২,২৯৩ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী বাস করেন। এছাড়াও, সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
প্রশাসন:
১৯৭৯ সালে থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত সাপাহার ১ মার্চ ১৯৮৫ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
অর্থনীতি:
সাপাহারের অধিবাসীদের অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজে ৭৯.০৩% জনসংখ্যা জড়িত। ধান, গম, সরিষা, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। আউশ ধান, তিল, তিসি, অড়হর বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, তরমুজ প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। কুটিরশিল্প, যেমন স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ, নকশি কাঁথা, নকশি পাখা ইত্যাদি এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
সাপাহারে শিক্ষার হার ৪২.২%। ৬টি কলেজ, ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫১টি মাদ্রাসা এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৫৫টি ক্লাব, ৩টি লাইব্রেরি, ১টি সিনেমা হল, ১টি নাট্যমঞ্চ এবং ৪টি নাট্যদল এখানকার সাংস্কৃতিক দিকের প্রতিফলন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
২১৭.১৪ কিমি পাকা রাস্তা, ৬.৬১ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ১৬৫.৪৫ কিমি কাঁচা রাস্তা সাপাহারের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাপাহার ৭ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১৪ আগস্ট, মুক্তিযোদ্ধারা হাপানিয়া সড়কে পাকবাহিনীর একটি জীপসহ ৫ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর পাকবাহিনীর প্রতিক্রিয়া সাপাহারের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যায় পরিণত হয়, যার প্রমাণ হিসেবে হাতিডাঙ্গা গ্রামে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান:
তিলনা মসজিদ, আলীনগর জামে মসজিদ, পুনর্ভবা নদীর পাড়ে শ্মশানঘাট ও মন্দির, জবাই বিল, পাহাড়ীপুকুর ব্রীজ।
বিঃ দ্রঃ এই তথ্য সীমিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। অধিকতর তথ্য পাওয়া গেলে প্রবন্ধটি আরও সম্পূর্ণ ও সুসংহত করা হবে।