ইরাকের সাবেক একনায়ক সাদ্দাম হোসেন (সাদ্দাম হোসেন আব্দুল মাজিদ আল তিকরিতি) (২৮ এপ্রিল ১৯৩৭ – ৩০ ডিসেম্বর ২০০৬) একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব যার দীর্ঘ শাসনকাল ইরাকের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭৯ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ইরাকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম ইরাকের তিকরিতের নিকটবর্তী আল-আওজা গ্রামে একটি সুন্নি আরব পরিবারে। একজন মেষপালক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাদ্দাম। ৬ মাস বয়সে পিতাকে হারানোর পর, ১০ বছর বয়সে বাগদাদে চাচার কাছে থাকতে চলে যায়। তার শৈশব ও কিশোর বয়স কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যে।
১৯৫৭ সালে তিনি আরব জাতীয়তাবাদী দল বাথ পার্টিতে যোগদান করেন, এবং দ্রুত রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৮ সালে আহমেদ হাসান আল-বকরের নেতৃত্বাধীন রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় আসে। ১৯৭৯ সালে আল বকর পদত্যাগ করার পর সাদ্দাম ইরাকের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন।
সাদ্দামের শাসনামল দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে সাথে তার রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও যুদ্ধ-সংঘাত ইরাকের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়। তার শাসনকালে ইরাক ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮৮) এবং উপসাগরীয় যুদ্ধ (১৯৯০-১৯৯১) সহ একাধিক যুদ্ধে জড়িত হয়, যা ইরাকের জনসাধারণের উপর কঠিন পরিণতি বয়ে আনে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠে।
২০০৩ সালে আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন জোটের আক্রমণের পর সাদ্দাম ক্ষমতাচ্যুত হন এবং গ্রেফতার হন। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইরাকি ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃত্যু ইতিহাসে গভীর চিহ্ন রেখে গেছে। ইরাকের জনগণের কাছে তিনি একজন দ্বন্দ্বপূর্ণ চরিত্র। একদিকে অর্থনৈতিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়া, অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকা। আজও তার চরিত্র ও ইতিহাস নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা চলছে।