শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি: কাতারের নবম আমির ও বিশ্ব নেতা
শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি (আরবি: تميم بن حمد بن خليفة آل ثاني; জন্ম: ৩ জুন, ১৯৮০) কাতারের নবম আমির। কাতারের পূর্ববর্তী আমির হামাদ বিন খলিফার চতুর্থ পুত্র তিনি। ২০১৩ সালে তার পিতা সিংহাসন ত্যাগ করলে তিনি কাতারের বর্তমান শাসক হন। ২০০৩ সালে তার বড় ভাই শেখ জসিম বিন হামাদ সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করার পর থেকে তামিম বিন হামাদ স্পষ্টভাবে কাতারি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়ে যান।
শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন:
শেখ তামিম ১৯৮০ সালের ৩ জুন কাতারের রাজধানী দোহায় জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির চতুর্থ পুত্র এবং তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী শেখা মোজা বিনতে নাসেরের দ্বিতীয় পুত্র তিনি। দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি যুক্তরাজ্যের ডরসেটে অবস্থিত শেরবোর্ন স্কুল এবং হ্যারো স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৭ সালে এ-লেভেল পাস করে তিনি রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে যোগ দেন এবং ১৯৯৮ সালে স্নাতক হন। স্যান্ডহার্স্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর কাতার সশস্ত্র বাহিনীতে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা:
২০০৩ সালের ৫ আগস্ট শেখ জসিম বিন হামাদের পদত্যাগের পর তিনি কাতারের স্পষ্ট উত্তরাধিকারী হন। এরপর তিনি শাসনভার গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেন এবং নিরাপত্তা ও অর্থনীতির বিভিন্ন পদে কাজ করেন। ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট তিনি কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ নিযুক্ত হন। তিনি কাতার বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আফগান যুদ্ধে আফগানিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি চুক্তির পেছনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানা যায়। ২০২১ সালে কাতারের মধ্যস্থতায় আফগানিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাষ্যমতে, শেখ তামিমের সহযোগিতা ব্যতীত এই চুক্তি সম্ভব হতো না।
অর্থনৈতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান:
শেখ তামিম কাতারের আন্তর্জাতিক প্রোফাইল বাড়াতে খেলাধুলার ব্যাপক প্রচারণা চালান। ২০০৫ সালে তিনি কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বে কাতার ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন করে এবং অবকাঠামোতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। তিনি প্যারিসের পারি সাঁ-জেরমাঁ (পিএসজি) ফুটবল ক্লাবের মালিকানাও ক্রয় করেন। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি কাতারের প্রভাব বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছেন।
কাতারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি:
শেখ তামিম কাতারে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন বলে পশ্চিমের দেশগুলি অভিযোগ করে। তিনি সমস্ত নির্বাহী ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখেন এবং দেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ। তবে তিনি কাতারি প্রশাসনে সংস্কার আনেন, আমলাতন্ত্রকে সুচারু করার জন্য বেশ কয়েকটি সমান্তরাল প্রতিষ্ঠানকে বিলীন করেন। রাস্তা প্রসার, নতুন মেট্রো ব্যবস্থা, এবং নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের মতো উন্নয়নমূলক কাজও সম্পন্ন হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
শেখ তামিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারত, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশের সাথে শক্তি ও বিনিয়োগ প্রকল্পে স্বাক্ষর করেন। কাতারের প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করলেও, ২০১৭ সালে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, এবং মিশরের সাথে কূটনৈতিক সংকট দেখা দেয়। পরে ২০২১ সালে এই সংকটের অবসান হয়।
শেষ কথা:
শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি কাতারের নবম আমির হিসেবে দেশটির অর্থনৈতিক, ক্রীড়া, এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাঁর শাসনামলে কাতার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তবে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁর শাসন ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমের দেশগুলির সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।