বাংলাদেশ শিশু একাডেমী: শিশুদের উন্নয়নের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী হলো মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এর প্রতিষ্ঠা হয়। দেশের শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়তা করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (৫০.৫৩%) শিশু, তাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই একাডেমীর গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রাথমিক ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা:
প্রাথমিকভাবে শিশু একাডেমীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল ঢাকার সেগুনবাগিচায়। ১৯৭৭ সালে এটি ঢাকার পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। প্রায় ৩.৬৯ একর জমির উপর অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চারটি ভবন রয়েছে: প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তন, যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি এবং প্রকাশনা ও লেকচার থিয়েটার ভবন। বর্তমানে সারা দেশে এর ৭০টি শাখা রয়েছে।
কার্যক্রম:
শিশু একাডেমীর কার্যক্রম ব্যাপক ও বহুমুখী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- শিশুসাহিত্য প্রকাশনা: শিশুদের উপযোগী বই, মাসিক পত্রিকা, কোষগ্রন্থ প্রকাশ। এ পর্যন্ত ৫০১ টি পুস্তক প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শিশু বিশ্বকোষ ও ছোটদের বিজ্ঞানকোষ।
- প্রতিযোগিতা: জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা (১৯৭৮ সাল থেকে), মৌসুমী প্রতিযোগিতা (বিতর্ক, জারিগান, জ্ঞান-জিজ্ঞাসা), শিশু আনন্দমেলা। প্রতিযোগিতাগুলিতে প্রতি বছর ৩ লাখের বেশি শিশু অংশগ্রহণ করে।
- প্রশিক্ষণ: চিত্রাংকন, সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যকলা, আবৃত্তি, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ। দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
- শিশু জাদুঘর ও গ্রন্থাগার: বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক তথ্যসমৃদ্ধ শিশু জাদুঘর। প্রতিটি শাখায় শিশু গ্রন্থাগার রয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের গ্রন্থাগারের নাম ‘জোবেদা খানম শিশু গ্রন্থাগার’।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস, রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপন।
- পুরস্কার: বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য ও শিশু নাট্য পুরস্কার।
- অন্যান্য: শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ, আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, শিশু সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল বিদেশে প্রেরণ।
শিশু একাডেমীর পরিচালনা:
একাডেমীর কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে। পরিচালক এর নির্বাহী প্রধান। ছয়টি বিভাগ রয়েছে: প্রশাসন, প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক, জাদুঘর, গ্রন্থাগার ও হিসাব বিভাগ।
উপসংহার:
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী শিশুদের সর্বাত্মক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর বিভিন্ন কর্মসূচি শিশুদের প্রতিভা বিকাশে, সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত করছে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। ভবিষ্যতে আরও বেশি শিশু এই প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়। আমরা শিশু একাডেমীর আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।