নওয়াব শামস-উদ-দৌলাহ: ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় নায়ক
বাংলার ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অনেক বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের কথা আমরা জানি। তাদের মধ্যে একজন অন্যতম প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব হলেন নওয়াব শামস-উদ-দৌলাহ। ১৮২২ থেকে ১৮৩১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকার নায়েব নাজিম ছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবন ছিল শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের নয়, বরং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
শামস-উদ-দৌলাহ ছিলেন ঢাকার নায়েব নাজিম হাশমত জঙ্গের এক কন্যাপক্ষের দৈহিত্র। তাঁর ইংরেজি ভাষায় অসাধারণ দক্ষতা ছিল, যা তিনি তাঁর নিজের সচিব মি. লী এর কাছ থেকে শিখেছিলেন। শুধু ইংরেজি ভাষাই নয়, ইউরোপীয় ইতিহাস ও ইংরেজি ক্লাসিক্যাল সাহিত্যেও তাঁর ছিল অভূতপূর্ব ব্যুৎপত্তি। উইলিয়ম হিকী ও বিশপ হেবারের ভাষ্য থেকে এ বিষয়টি জানা যায়।
কিন্তু ইংরেজি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক দক্ষতা সত্ত্বেও তিনি কখনোই ব্রিটিশ শাসন মেনে নিতে পারেননি। কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রতিরোধ চালিয়ে যান। মহীশূরের টিপু সুলতান, আফগান রাজা জমান খান এবং বাংলার অনেক জমিদারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তিনি ব্রিটিশ শাসন উৎখাতের এক ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আফগান রাজা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ব্রিটিশ রাজ্য আক্রমণ করলে এক ব্যাপক অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার কথা ছিল।
দুর্ভাগ্যবশত, অযোধ্যার নির্বাসিত নওয়াব ওয়াজির আলীর পলায়নের সময় চিঠিপত্রের থলে হারিয়ে যাওয়ার কারণে এই ষড়যন্ত্র ব্রিটিশদের কাছে উন্মোচিত হয়। চিঠিপত্রগুলি থেকে ব্রিটিশরা শামস-উদ-দৌলাহ ও ওয়াজির আলীর মধ্যকার সম্পর্ক এবং তাদের ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত জানতে পারে। ফলে শামস-উদ্-দৌলাহকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং কলকাতায় রাজদ্রোহের দায়ে তাঁকে আজীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
তবে তাঁর ভ্রাতা নওয়াব নসরত জং ইংরেজ অনুগত ছিলেন। তিনি অনেক চেষ্টার পর শামস-উদ-দৌলাহকে কলকাতার কারাগার থেকে মুক্ত করে নজরবন্দী অবস্থায় ঢাকায় আনেন। ১৮২২ সালে নসরত জং এর মৃত্যুর পর সরকার শামস-উদ্-দৌলাহকে নায়েব-নাজিমের পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেয়, যা তিনি গ্রহণ করেন। কিন্তু দারিদ্র্য ও নৈরাশ্যের ফলে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং ১৮৩১ সালে তিনি মারা যান। নওয়াব শামস-উদ-দৌলাহের জীবন ছিল ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি একজন দেশপ্রেমিক, প্রতিভাবান ও সাহসী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যার কীর্তি ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে রয়েছে।