রিকশা: বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও পরিচয়
বাংলাদেশের রাস্তায় রিকশা একটি চিরচেনা দৃশ্য। এটি শুধুমাত্র একটি পরিবহনের মাধ্যম নয়, বরং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাপানি শব্দ ‘জিনরিকিশা’ থেকে ‘রিকশা’ শব্দের উৎপত্তি। ১৮৬৯ সালে জোনাথন স্কোবি নামে একজন মার্কিন মিশনারি ভারতের সিমলায় রিকশা উদ্ভাবন করেন বলে মনে করা হয়। ১৯০০ সালে কলকাতায় এবং ১৯১৪ সালে কলকাতা পৌরসভা রিকশা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ১৯১৯ সালে রেঙ্গুন থেকে রিকশা চট্টগ্রামে আসে, এবং ঢাকায় আসে কলকাতা থেকে।
ঢাকা: রিকশার রাজধানী
ঢাকা শহরকে বিশ্বের রিকশার রাজধানী বলা হয়। প্রতিদিন ঢাকায় প্রায় ৪,০০,০০০ টি সাইকেল রিকশা চলাচল করে বলে জানা যায়। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, ঢাকায় অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০% মানুষ রিকশায় চড়ে। এই অসংখ্য রিকশা একদিকে যেমন জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করে, তেমনি যানজটেরও অন্যতম কারণ।
রিকশাচিত্র: একটি ঐতিহ্য
বাংলাদেশের রিকশাগুলোতে শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠে রিকশাচিত্র। ফুল-ফল, নদ-নদী, দেশের প্রকৃতি, চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা, দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য ইত্যাদি রিকশাচিত্রে ঠাঁই পায়। রিকশাচিত্র বাংলাদেশের একটি নিজস্ব চিত্রশিল্প। ১৯৫০-এর দশক থেকে রিকশাচিত্রের প্রচলন শুরু হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতির আগমনে হাতে আঁকা চিত্রকর্ম কমে গেলেও, রিকশাচিত্র এখনও বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে।
গবেষণা ও উদ্ভাবন
বাংলাদেশে রিকশা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। প্রকৌশলী বোরহান রিকশার জন্য বিভিন্ন সুবিধাজনক সরঞ্জামাদি উদ্ভাবন করেছেন, যেমন শক অ্যাবজর্বিং বাম্পার, হুইল ক্যাপ এবং রিকশা ফাঁদ। রিকশা ফাঁদ ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
রিকশার ভবিষ্যৎ
আধুনিক যানবাহনের আগমনে রিকশার ব্যবহার কিছুটা কমলেও, বাংলাদেশের রাস্তায় রিকশার উপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। রিকশা শুধুমাত্র একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক উপাদান।