বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ, একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের একজন অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী হিসেবে পরিচিত। বিবিসি বাংলার ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে তিনি ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিলেন।
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণকারী রোকেয়ার পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ছিলেন একজন শিক্ষিত জমিদার। তিনি আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। রোকেয়ার মাতা ছিলেন রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার ছিল দুই বোন (করিমুননেসা ও হুমায়রা) এবং তিন ভাই।
রক্ষণশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠা রোকেয়া সীমিত সুযোগের মধ্যেও নিজের জ্ঞান-পিপাসা মেটাতে সফল হন। তিনি বড় ভাই ও বোনের সহায়তায় বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি এবং আরবি ভাষা শিখেছিলেন। ১৯০৫ সালে লিখিত 'সুলতানার স্বপ্ন' নামক ইংরেজি উপন্যাসটি তাঁর সাহিত্যকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বিশ্ব সাহিত্যে নারীবাদী সাহিত্যের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রোকেয়া। সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর, রোকেয়া নারী শিক্ষা ও সমাজসেবায় নিজেকে নিবেদন করেন। ১৯০৯ সালে ভাগলপুরে এবং পরে ১৯১১ সালে কলকাতায় ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯১৬ সালে মুসলিম নারীদের সংগঠন ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নারীশিক্ষা, লিঙ্গসমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তিনি অকুতোভয়ভাবে কথা বলেছেন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন তার রচনার মাধ্যমে। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন রোকেয়া।
রোকেয়ার রচনাবলীতে নারীদের অধিকার, শিক্ষার গুরুত্ব, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সমালোচনা, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয় প্রতিফলিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘মতিচূর’, ‘পদ্মরাগ’, ‘অবরোধবাসিনী’।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবন ও কর্মকান্ড বাংলাদেশের নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর অবদান স্মরণে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস পালন করে।