বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘রাজস্ব কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। বর্তমানে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রশাসন একই সংস্থা এনবিআরের অধীনে থাকায় আপোষকামিতা, দুর্নীতি এবং স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠে আসে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কাজ আলাদা করে একটি স্বাধীন সংস্থা ‘রাজস্ব কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনটি সরকারের বিভাগীয় মর্যাদা পাবে এবং অর্থমন্ত্রীর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আয়কর বা শুল্ক ক্যাডারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন। কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন করের হার নির্ধারণ, কর সংক্রান্ত আইন ও বিধি প্রণয়ন, সংশোধন এবং ব্যাখ্যা প্রদান করা। এছাড়াও, অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণ করে কমিশন রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে।
কমিশনের সাথে কাজ করার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এতে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, গবেষক, ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা থাকবেন। এই পরিষদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রাজস্ব কমিশনকে পরামর্শ দিবে। কমিশন সচিবালয় ও রাজস্ব ভবনের বাইরে স্থাপন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে করদাতারা সহজে সেবা পেতে পারেন।
এনবিআর সংস্কারের অংশ হিসেবে, রাজস্ব নীতি পৃথক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে এনবিআরকে আয়কর বিভাগ ও শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র বিভাগে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করবেন।
এই রাজস্ব কমিশন গঠনের ফলে করদাতা হয়রানি কমবে ও কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কমিশনের প্রধান নিয়োগ ও কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তারা চান, কমিশন তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকুক। এ বিষয়ে আরও প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। আমরা যখন আরও তথ্য পাব, তখন এই নিবন্ধটি আপডেট করব।