মওলানা আবুল কালাম আজাদ: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অম্লান নক্ষত্র
মওলানা আবুল কালাম আজাদ (১১ নভেম্বর ১৮৮৮ - ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, চিন্তাবিদ এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। তিনি মৌলানা আজাদ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেও তার বাল্যকাল ও যৌবন কাটে ভারতে। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন এবং একই সাথে আধুনিক শিক্ষা ও জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার প্রবক্তা ছিলেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রবক্তা ছিলেন এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
তরুণ বয়সে তিনি উর্দু ভাষায় কবিতা ও ধর্মীয় নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। তারপর সাংবাদিকতা শুরু করে ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করেন এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে সমর্থন দেন। তিনি খিলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হন। ১৯১৯ সালের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গান্ধীজির অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৩ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন, যা ছিল কংগ্রেসের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।
১৯৩১ সালে তিনি ধারাসন সত্যাগ্রহে অংশ নেন এবং দেশের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় (১৯৪০-১৯৪৫) পাঁচ বছর কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং তিন বছর কারারুদ্ধ থাকেন। স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯২ সালে তাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদান করা হয়।
মৌলানা আজাদ একজন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিকও ছিলেন। তিনি 'আল-হিলাল' এবং 'আল-বালাঘ' নামে দুটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশ করেন, যা ব্রিটিশ শাসনের তীব্র সমালোচনা ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আজাদের জীবন ও কর্ম ভারতীয় ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তার ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, জাতীয় ঐক্যের প্রতি অঙ্গীকার এবং শিক্ষার প্রতি অবদান তাকে আজও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখা হয়।