মুহাম্মদ ইউনূস: বাংলাদেশের অমিত সম্পদ
মুহাম্মদ ইউনূস (জন্ম: ২৮ জুন, ১৯৪০) একজন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, সামাজিক উদ্যোক্তা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। তিনি ক্ষুদ্রঋণের জনক হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের দরিদ্রদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের একটি অনুকরণীয় মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
ইউনূসের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে। একজন সওদাগর পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ:
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় দরিদ্রদের অবস্থা দেখে ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের ধারণা পেয়েছিলেন। তিনি নিজের অর্থ ব্যবহার করে প্রথমে ৪২ জন মহিলাকে ঋণ দেন। পরে সরকারি জনতা ব্যাংকের সহায়তায় এই উদ্যোগ ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে নারীরা, ঋণ পেয়েছে এবং নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছে।
সম্মাননা ও পুরস্কার:
ইউনূসের অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০০৬ সালে তিনি ক্ষুদ্রঋণের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন ও বিতর্ক:
২০০৭ সালে ইউনূস রাজনীতিতে প্রবেশের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে পড়েন। পরে তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন। গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের সাথে তার দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষ চলে আসছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা:
২০২৪ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, ছাত্রদের দাবী মেনে রাষ্ট্রপতি তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন।
উত্তরাধিকার:
মুহাম্মদ ইউনূসের কাজ দারিদ্র্য বিমোচনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার ক্ষুদ্রঋণের ধারণা বিশ্বের অনেক দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি একজন অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রমাণ করেছেন যে ক্ষুদ্র পরিবর্তন বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।