মির্জাপুর: টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা ৩৭৩.৮৮ বর্গ কিমি আয়তনের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা। ২৪°০১´ থেকে ২৪°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৮´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এ উপজেলা উত্তরে সখীপুর ও বাসাইল, দক্ষিণে কালিয়াকৈর ও ধামরাই, পূর্বে কালিয়াকৈর এবং পশ্চিমে দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলার সাথে সীমানা ভাগ করে নিয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ৪০৭৭৮১, যার মধ্যে পুরুষ ১৯৫২৫৬ এবং মহিলা ২১২৫২৫। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা মুসলিম (৩৫৫৬৩৬), হিন্দু (৫১৮৬৭) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা নগণ্য। বংশী, তুরাগ ও ফুটজানি নদী এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
মির্জাপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৯১৩ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮২ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোড়ান সাটিয়াচড়া, রামপুর, পাথরঘাটা, নয়াপাড়া ইত্যাদি স্থানে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকুল্লার মসজিদ, একটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাচীন স্থাপত্য, উপজেলার ঐতিহাসিক গৌরব বহন করে। এছাড়াও পাকুল্লায় একটি বধ্যভূমি এবং গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় একটি গণকবর আছে যা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি বহন করে।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
মির্জাপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, সরিষা, আলু, গম, ডাল, আখ, শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। কৃষির পাশাপাশি ব্যবসা, চাকরি, নির্মাণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও মানুষ কর্মসংস্থানে জড়িত। শিক্ষার দিক থেকেও মির্জাপুর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এখানে ৬টি কলেজ, ১টি মেডিকেল কলেজ, ১টি ক্যাডেট কলেজ, ১টি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, ২টি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৫), কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ (২০০১) এর মতো প্রতিষ্ঠান এ উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার গৌরব বৃদ্ধি করেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিকাঠামো:
মির্জাপুর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৮৮ সালের বন্যা এ উপজেলাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরিকাঠামোর দিক থেকে, ১৩২ কিমি পাকা রাস্তা, ১৮ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৮০০ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। ১২ কিমি রেলপথ উপজেলাকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহায়তা করে। বিদ্যুৎ পৌঁছেছে প্রায় সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে, যদিও সকল পরিবারে বিদ্যুতের ব্যবহার সমান নয়। পানীয় জলের উৎস মূলত নলকূপ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে।
উপসংহার:
মির্জাপুর ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখানে আরো বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড প্রয়োজন।