মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী: একজন বিতর্কিত ও জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা
মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী বাংলাদেশের একজন বিতর্কিত ও জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা। তিনি তার বক্তব্যের ধরণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়তা জন্য পরিচিত। তার কণ্ঠস্বর এবং শারীরিক গঠনের কারণে তাকে অনেকে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবেও ডাকেন, যদিও এ নামকরণ নিয়ে তার নিজেরও কিছুটা আপত্তি রয়েছে।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
১৯৯৪ সালে নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা এলাকায় সাহাব উদ্দিনের পুত্র রফিকুল ইসলামের জন্ম। তার বাবা ছিলেন সাধারণ শ্রমিক। আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। তার চার ভাই এবং তিন বোন রয়েছে। পুরাকান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর তিনি জারিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং নেত্রকোনার একটি মাদ্রাসায় হিফজুল কোরআন সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গাজীপুরের কোনাবাড়ী এবং অবশেষে ঢাকার বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমানের) ডিগ্রি লাভ করেন। এই মাদ্রাসা থেকেই তিনি তার নামের শেষে ‘মাদানী’ উপাধি যুক্ত করেন।
ওয়াজ ও কর্মজীবন:
২০১২ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। বারিধারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষে তিনি বাংলাদেশের একজন আলোচিত বক্তা হয়ে ওঠেন। তিনি বিএনপি-জামাত জোটের শরিক দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অঙ্গ সংগঠন যুব জমিয়তের নেত্রকোণা জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন এবং নেত্রকোনার পশ্চিম বিলাশপুর সাঁওতালেরা মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে তাকে ওয়াজকারী বক্তাদের সংগঠন রাবেয়াতুলজিম বাংলাদেশের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি।
আইনি জটিলতা ও গ্রেফতার:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল র্যাব তাকে নেত্রকোণার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। রাষ্ট্রবিরোধী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মতিঝিল, গাজীপুরের বাসন ও তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক মামলা হয়। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ কিছুদিন থাকার পর জামিনে মুক্তি পান। ২০২১ সালের ২৫শে মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণেও তাকে আটক করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলায় আইনজীবী আশরাফ আলী মোল্লা তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
'মাদানী' উপাধি নিয়ে বিতর্ক:
তার নামের শেষে ‘মাদানী’ উপাধি যুক্ত করার বিষয়েও বিতর্ক থাকে। হেফাজতে ইসলামের মদিনা শাখার আমির একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়ে এই উপাধি ব্যবহারের বিরোধিতা করেন।
সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা:
রফিকুল ইসলাম মাদানী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। ‘নুরিয়া ইসলামিক মিডিয়া’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে তার অনেক বক্তব্য আপলোড করা হয়। তার বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দল, সরকার, সেনাবাহিনী এবং সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তীব্র সমালোচনা থাকে। তিনি নারী ক্ষমতায়ন বিরোধী ও নারী বিদ্বেষী বক্তব্য ও দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
উল্লেখ্য: এই লেখাটি শুধুমাত্র উপলব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। আরও তথ্য পেলে লেখাটি আপডেট করা হবে।