মনোহরদী: নরসিংদী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। ১৯৩.৮৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°০৪´ থেকে ২৪°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। উত্তরে পাকুন্দিয়া, দক্ষিণে শিবপুর, পূর্বে বেলাবো ও কটিয়াদি এবং পশ্চিমে কাপাসিয়া উপজেলা মনোহরদীর সীমান্তবর্তী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মনোহরদীর জনসংখ্যা প্রায় ২৭৫১১২। মুসলিম অধিবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদী এবং গোটাসিয়া, জরিয়া ও পারইল বিল উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়। ১৯০৪ সালে মনোহরদী থানা গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে মনোহরদী বেশ সমৃদ্ধ। ১৮৯০ সালে নির্মিত মিয়াবাড়ির এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং ১৯০০ সালে নির্মিত শুকুনদি আবদুল হাই মৌলভীর মসজিদ উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর গণআন্দোলনে হাতিরদিয়া বাজারে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু ঘটেছিল। মুক্তিযুদ্ধেও মনোহরদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৭১ সালে মনোহরদী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকসেনা ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর হামলা এবং শুকুনদি ইউনিয়নের দশদোনা গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
মনোহরদীতে ৬৪৫টি মসজিদ, ২৬টি মন্দির এবং ২টি মাযার রয়েছে। বিলাগী মিয়াবাড়ি মসজিদ, শুকুনদি আবদুল হাই মৌলভীর মসজিদ, নারান্দী আশক মোল্লার মসজিদ, আসাদনগর মাযার এবং মনোহরদী পাগলনাথ আশ্রম উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার হার ৪৯.৯%। হাতিরদিয়া রাজিউদ্দিন কলেজ, খিদিরপুর কলেজ, খিদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চালাকচর উচ্চ বিদ্যালয়, হাতিরদিয়া সাদত আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মনোহরদী উচ্চ বিদ্যালয়, এলকে ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, শেকেরগাঁও সিনিয়র মাদ্রাসা, ধরাবান্দা ফাজিল মাদ্রাসা এবং দশদোনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মনোহরদীর অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আখ, পান, রসুন এবং শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। ৩১১ কিমি পাকা রাস্তা এবং ২৭ টি হাটবাজার রয়েছে। পাট, কলা, পান, রসুন এবং শাকসবজি প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। সব ইউনিয়ন বিদ্যুতায়িত, তবে ৫৬.৭% পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। নলকূপ প্রধান পানীয়জলের উৎস। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৭ টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। ব্র্যাক ও আশা উল্লেখযোগ্য এনজিও।