মতিউর রহমান

বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান: অসামান্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগের গল্প

বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (২৯ অক্টোবর ১৯৪১ - ২০ আগস্ট ১৯৭১) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অমর নায়ক। তার অসামান্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতিফলন ঘটেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময়ও তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং শেষ পর্যন্ত জাতির মুক্তির জন্য প্রাণের বিনিময় করেন। তার বীরত্বের জন্য তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

মতিউর রহমানের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডের “মোবারক লজ”-এ। তার পিতা মৌলভী আবদুস সামাদ এবং মাতা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। নয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে, যা এখন মতিউরনগর নামে পরিচিত। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পাস করার পর তিনি সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় ডিসটিংশনসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। তার কর্মজীবন করাচি, পেশোয়ার এবং সারগোদা সহ বিভিন্ন স্থানে কাটে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালের শুরুতে তিনি সপরিবারে ঢাকায় দুই মাসের ছুটিতে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর গ্রামে অবস্থান করেন।

যুদ্ধ শুরু হলে তিনি অসীম ঝুঁকি নিয়ে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি দৌলতদিয়া এবং ভৈরবে জনসভা ও মিছিল করে জনসাধারণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছড়িয়ে দেন। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজেও তিনি অংশ নেন। পরবর্তীতে পারিবারিক চাপে তিনি মে মাসে পাকিস্তান ফিরে যান।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার অদম্য ইচ্ছা তাকে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করতে প্ররোচিত করে। ২০ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে করাচির মশরুর বিমানঘাঁটিতে তিনি একটি টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান ছিনতাই করার চেষ্টা করেন। বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করার সময় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সাথে সংঘর্ষে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃতদেহ পরে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃদাফন করা হয়।

মতিউর রহমানের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। তার জীবনী একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • মতিউর রহমান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন
  • তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন
  • তাকে বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে
  • তিনি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টায় প্রাণ দিয়েছিলেন