ভ্যাট: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর ব্যবস্থা
ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax) হলো একটি আধুনিক কর ব্যবস্থা যা যেকোনো ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রতিটি পর্যায়ে যোগ করা মূল্যের উপর আরোপিত হয়। এটি বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং ধীরে ধীরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গ্রহণ করা হয়েছে। ভ্যাট দেশীয় পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি এবং সেবা খাতের উৎপাদন ও বিক্রয়ের উপর প্রযোজ্য। এই করের বোঝা চূড়ান্তভাবে ভোক্তাদের উপর পড়ে। ভ্যাট আবগারী শুল্ক ও বিক্রয় করের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে।
- *ভ্যাট ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য:**
- **মূল্য সংযোজনের উপর কর:** প্রতিটি পর্যায়ে যোগ করা মূল্যের উপর কর আরোপিত হয়, ফলে করের পুনঃপুনঃতা এড়ানো যায়।
- **একক হার:** আদর্শ ভ্যাট ব্যবস্থা একক হারে কার্যকর হয়।
- **বাজারমূল্যের উপর ভিত্তি:** করের হিসাব বাজারমূল্যের উপর নির্ভর করে।
- **ভোক্তা ভিত্তিক:** করের ভার চূড়ান্তভাবে ভোক্তার উপর পড়ে।
- **ছোট ব্যবসায়ীর ছাড়:** ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য করের ছাড় বা কম হারে কর ধার্য করা হয়।
- *বিশ্বে ভ্যাটের ইতিহাস:**
বিশ্বে প্রথম ভ্যাট ব্যবস্থা ১৯২২ সালে জার্মানিতে চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৪০ সালে জাপান এবং ১৯৪৮ সালে ফ্রান্সে এটি চালু হয়। ইংল্যান্ড, কানাডা, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকর।
- *বাংলাদেশে ভ্যাটের ইতিহাস:**
বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ভ্যাট প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু তীব্র সমালোচনার মুখে তা বাতিল করা হয়। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্যাট বিল জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং ১৯৯১ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। বাংলাদেশে ভ্যাটের হার শতকরা ১৫% নির্ধারিত।
ভ্যাট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজস্ব আহরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।