ভৈরব

ভৈরব: কিশোরগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হল ভৈরব। ভৈরব উপজেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর এবং কিশোরগঞ্জ জেলার বৃহত্তম শহর হিসেবে এর স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। ১৫.৭১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রায় ১১৮,৯৯২ জন মানুষ বসবাস করে, যা বাংলাদেশের ৩৮তম বৃহৎ জনসংখ্যার নগরী। ঢাকার সাথে দেশের উত্তর-পূর্বাংশের যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ভৈরবের অবদান অপরিসীম। নদী, সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে এটি ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাথে যুক্ত।

ভৈরবের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশন ও ভৈরব নদী বন্দর। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভৈরবের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শতবর্ষী প্রাচীন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা, রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ১টি সড়ক ও ২টি রেলওয়ে সেতু ভৈরবকে করে তুলেছে আরো গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এন২ ভৈরব শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে।

আঠারো শতকে রেনেলের মানচিত্রে ভৈরবের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এর পূর্ব নাম ছিল উলুকান্দি। মুক্তাগাছার জমিদার ভৈরব রায় তার জমিদারী সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে মেঘনার নতুন জেগে উঠা এলাকায় মানব বসতি গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে জমিদারের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় ভৈরব বাজার। অন্য মতে, ভৈরব শব্দটির অর্থ ভয়ংকর, সেই কারণে এ নামকরণ হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

ভৈরব বাজার রাজধানী ঢাকা থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২৪º০২΄ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪º১১΄ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৯০º৫৪΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯০º০২΄ দ্রাঘিমাংশে। এর আয়তন ১৫.৭১ বর্গকিলোমিটার এবং ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১১৮,৯৯২।

ভৈরবের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মধ্যে কৃষি, ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগ, চাকরি, নির্মাণ এবং কুটির শিল্প উল্লেখযোগ্য। ধান, পাট, চীনাবাদাম, সরিষা, আলু, ডাল, তিল, মরিচ, ধনিয়া, আদা, হলুদ, শাকসবজি এই অঞ্চলের প্রধান কৃষি ফসল। জুটমিল, রাইসমিল, চিড়ামিল, স্টিল মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, সাবান ফ্যাক্টরি ইত্যাদি শিল্প কারখানা ভৈরবের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভৈরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকবাহিনীর নৃশংসতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের অনেক ঘটনা এই শহরের ইতিহাসে স্মরণীয়। ভৈরবের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্মৃতি স্থাপনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সারসংক্ষেপে, ভৈরব বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর যা এর ভৌগোলিক অবস্থান, অবকাঠামো, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

মূল তথ্যাবলী:

  • ভৈরব কিশোরগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।
  • এটি ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেল ও সড়ক যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র।
  • মুক্তাগাছার জমিদার ভৈরব রায়ের নামানুসারে শহরের নামকরণ।
  • মুক্তিযুদ্ধে ভৈরবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
  • কৃষি ও শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতি।