বোয়ালমারী: ফরিদপুরের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপজেলা
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল বোয়ালমারী। ২৭১.৭৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৩°১৭´ থেকে ২৩°৩২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৬´ থেকে ৮৯°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে মধুখালী, দক্ষিণে আলফাডাঙ্গা ও কাশিয়ানী, পূর্বে সালথা ও ফরিদপুর সদর, এবং পশ্চিমে মোহাম্মদপুর ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। মধুমতি, পুরাতন কুমার ও বড়শিয়া নদী, এবং চাপরাদহ, নদের চাঁদ ও চিতলিয়া বিল বোয়ালমারীর উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
বোয়ালমারীর ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৬ শতকে সাতৈর গ্রামের উন্নয়ন বোয়ালমারীর ইসলামী সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত নয় গম্বুজবিশিষ্ট সাতৈর শাহী জামে মসজিদ এ উপজেলার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নতুবদিয়া বাজার ও ধোপাডাংগা, চাঁদপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই হয়।
জনসংখ্যা ও প্রশাসন:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বোয়ালমারীর জনসংখ্যা ২৫৬৬৫৮; পুরুষ ১২৬৪২৮ এবং মহিলা ১৩০২৩০। মুসলিম ২২৬৭১৬, হিন্দু ২৯৭৮২, অন্যান্য খুবই কম। ১৯০৬ সালে বোয়ালমারী থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৯৯ সালে বোয়ালমারী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয়।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
বোয়ালমারীর অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, ইক্ষু, পাট, পিঁয়াজ ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। শিক্ষার হার ৪৭.৩%; পুরুষ ৪৮.১% এবং মহিলা ৪৬.৬%। উপজেলায় ৪টি কলেজ, ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১২টি মাদ্রাসা রয়েছে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
বোয়ালমারীর একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। কয়রা কালীবাড়ি মন্দির উল্লেখযোগ্য। বোয়ালমারীতে ১টি লাইব্রেরি, ১টি নাট্যদল, ২টি সিনেমা হল, ২০টি ক্লাব ও ৩২টি খেলার মাঠ রয়েছে।
যোগাযোগ:
বোয়ালমারীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। ১২০ কিমি পাকা রাস্তা, ২৫ কিমি আধাপাকা রাস্তা, ৩৬০ কিমি কাঁচারাস্তা, ২৪ কিমি রেলপথ ও ৩৫ কিমি নৌপথ রয়েছে।