বিয়ানীবাজার উপজেলা: সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা
সিলেট জেলার দক্ষিণে অবস্থিত বিয়ানীবাজার উপজেলা বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এর ঐতিহাসিক নাম ছিল 'পঞ্চখন্ড'। কৃষ্ণ কিশোর পাল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত বাজারটি 'বিয়ানে' (সকালবেলা) বসত বলেই এর নামকরণ 'বিয়ানীবাজার'। এই উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে এবং দেশে প্রচুর রেমিটেন্স পাঠায়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
- ১৭৬৫ সালে মোগল অধিকৃত সিলেট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে।
- ১৭৮২ সালে সিলেট ঢাকা প্রশাসন থেকে স্বতন্ত্র হয়।
- ১৮৭৪ সালে আসামের সাথে সংযুক্ত হয়।
- ১৭৯৩ সালে জলঢুপ (বর্তমানে থানা বাজার) থানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৯৪৭ সালের গণভোটে সিলেট পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়।
- ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট জেনারেল শামসুল হক বিয়ানীবাজারকে উপজেলা হিসেবে উন্নীত করেন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
উত্তরে কানাইঘাট, দক্ষিণে বড়লেখা, পূর্বে জকিগঞ্জ ও ভারতের আসাম, পশ্চিমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ২,৫৩,৩৭০।
অর্থনীতি:
কৃষি, ব্যবসা, চাকরি, রেমিটেন্স এ উপজেলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ধান, আলু, তিল, তেজপাতা প্রধান কৃষি ফসল। কমলা, লিচু, কাঁঠাল প্রধান ফল। প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনও উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
এখানে কলেজ, মাধ্যমিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান:
বার হালের দিঘি, গোলাব শাহের মাযার, বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্র।
মুক্তিযুদ্ধ:
মুক্তিযুদ্ধের সময় বিয়ানীবাজারে বহুলোককে হত্যা করা হয়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধের স্মৃতি রয়েছে শহীদ টিলায়।
বিয়ানীবাজার উপজেলা এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রবাসীদের অবদান এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে সিলেট অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।