বিনীতা রায়

বিনীতা রায়: একজন অসাধারণ নারীর জীবনকাহিনী

বিনীতা রায় (১৮ আগস্ট ১৯০৭ - ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯০) ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী নারী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্য, সাহিত্যরসিকা, কূটনীতিবিদ এবং মন্ত্রী। চাকমা সার্কেলের ঊনপঞ্চাশতম রাণী হিসেবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। ত্রিদিব রায় ও দেবাশীষ রায়ের রাজত্বকালে তিনি রাজমাতার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯০৭ সালের ১৮ আগস্ট ইংল্যান্ডের সারেইতে জন্মগ্রহণকারী বিনীতা রায় কলকাতার বেথুন কলেজে পড়াশোনা করেন। সরলচন্দ্র সেন ও নির্মলা দেবী সেনের কন্যা বিনীতা রায় ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের নাতনী ছিলেন। তার পিতা ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল হাইকোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। এই পরিবারের সংযোগেই তিনি কুচবিহারের মহারাণী সুনীতি দেবী ও ময়ূরভঞ্জের মহারাণী সুচারু দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্রী হন। রাজা নলিনাক্ষ রায়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি চাকমা সার্কেলের রাণী হন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে বিনীতা রায় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম সাহিত্য পত্রিকা ‘গৈরিকা’ প্রকাশ করেন। এই পত্রিকা চাকমা ভাষায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সাহিত্য চর্চায় অবদান রাখে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে বিনীতা রায় রাঙ্গামাটি প্রাসাদকে সাধারণ মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেন। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার তাঁর পুত্র ত্রিদিব রায়কে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠায়।

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিনীতা রায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভূমি পুনর্গঠন ও ভূমি পুনর্বাসন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। চাকমা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কাজ করে গেছেন।

১৯৯০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির রাজভবনে বিনীতা রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জীবন ছিল এক অসাধারণ নারীর জীবনযাত্রার উদাহরণ।

মূল তথ্যাবলী:

  • বিনীতা রায় ছিলেন চাকমা সার্কেলের ঊনপঞ্চাশতম রাণী।
  • তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন।
  • তিনি বাংলাদেশ সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
  • তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম সাহিত্য পত্রিকা ‘গৈরিকা’ প্রকাশ করেন।
  • মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি রাঙ্গামাটি প্রাসাদকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন।