বিচার: ন্যায়বিচারের ধারণা ও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা
আইনশাস্ত্র ও দর্শনশাস্ত্রে বিচার বলতে কোন ব্যক্তির প্রাপ্য কী এবং তার জন্য ভাল ও মন্দের সঠিক অনুপাত কী, তার তত্ত্বকে বোঝায়। ন্যায়বিচারকে বিতরণমূলক, শাস্তিমূলক/সংশোধনমূলক এবং পুনরুদ্ধারমূলক/ ক্ষতিপূরণমূলক বিচারে ভাগ করা যায়। প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের লেখা থেকে পশ্চিমী মতবাদ উৎসারিত হলেও, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ন্যায়বিচারের ধারণা ভিন্ন। ঈশ্বর নির্ধারিত বিচারের ধারণা, প্রাকৃতিক বিধি, সামাজিক চুক্তি, উপযোগবাদ ও মানবসমতাবাদ বিচারের বিভিন্ন তত্ত্ব।
- *বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা:** বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা উচ্চতর বিচার বিভাগ (সুপ্রিম কোর্ট) এবং অধস্তন বিচার বিভাগ (নিম্ন আদালত) নিয়ে গঠিত। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত, যার দুটি বিভাগ: হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন, আইন পর্যালোচনা ও মামলা প্রত্যাহারের ক্ষমতা আছে। আপীল বিভাগে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন বা আদালত অবমাননার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়।
- *অধস্তন আদালত:** অধস্তন আদালতগুলির মধ্যে দেওয়ানি (সহকারী জজ, সাবজজ, অতিরিক্ত জজ, জেলা জজ), অর্থঋণ আদালত, দেউলিয়া আদালত, ফৌজদারি (দায়রা আদালত, মহানগর হাকিম, প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট) এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল উল্লেখযোগ্য। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের।
- *বিচার গান:** এটি বাংলা লোকসংগীতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করে। মূলত বাউলদের মধ্যে প্রচলিত, পরে এটি বিস্তৃত হয়েছে। বিষয়বস্তু: শরিয়ত, মারিফত, নবীতত্ত্ব, আদমতত্ত্ব ইত্যাদি। বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন নামে পরিচিত (ঢাকা-পূর্ব সিলেট: বাউল গান, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ: ফকিরালি গান, যশোর: ধুয়া গান, খুলনা: শব্দ গান ইত্যাদি)।
- *বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ:** ঔপনিবেশিক যুগ থেকেই নির্বাহী ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের বিতর্ক চলে আসছে। ১৯৯৯ সালের মাজদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে এ বিতর্কের অবসান ঘটে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আইন প্রণয়ন করে। বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হয়।
- *বিচার বিভাগীয় উদ্যোগ:** সাধারণ আইনে আদালত বাদী-বিবাদী ব্যবস্থায় কাজ করে, কিন্তু জনস্বার্থে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তি বা সংস্থা স্বেচ্ছায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বিচার বিভাগীয় স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ (সুয়োমটো) শুরু হয়।
- *যুদ্ধবন্দী বিচার:** ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের জন্য শনাক্ত করা হয়, পরে আন্তর্জাতিক চাপে এ বিচারের দাবি প্রত্যাহার করা হয়।