বাচ্চু

আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:২২ পিএম

আইয়ুব বাচ্চু: বাংলাদেশের রক কিংবদন্তী

আইয়ুব বাচ্চু (১৬ আগস্ট ১৯৬২ – ১৮ অক্টোবর ২০১৮) বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তী রক সঙ্গীতশিল্পী, গায়ক, গীতিকার এবং গিটারিস্ট ছিলেন। তিনি 'লিটল রিভার ব্যান্ড' (এল আর বি) নামক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণ ছিলেন, যা বাংলাদেশের রক সঙ্গীতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার গান ও গিটারের বাজনা দেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে।

প্রাথমিক জীবন ও সঙ্গীতের সূচনা:

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর তার পরিবারের সাথে চট্টগ্রাম শহরের জুবিলি রোডে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে তার বাবা তাকে একটি গিটার উপহার দেন, যা তার সঙ্গীত জীবনের সূচনা। তিনি বিভিন্ন ব্রিটিশ ও আমেরিকান রক ব্যান্ডের প্রভাব নিয়ে ‘আগলি বয়েজ’ এবং ‘ফিলিংস’ (বর্তমানে ‘নগর বাউল’) ব্যান্ডের সাথে কর্মজীবনের শুরুতে কাজ করেন। জেকব ডায়াজ নামের একজন বার্মিজ ব্যক্তি তার প্রাথমিক গিটার শিক্ষক ছিলেন।

সোলস ও এল আর বি:

১৯৮০ সালে বাচ্চু জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোলস’-এ যোগ দেন। ‘সুপার সোলস’, ‘কলেজের করিডোরে’, ‘মানুষ মাটির কাছাকাছি’, ও ‘ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট’ অ্যালবামে তিনি গিটার বাজিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে নিজের ব্যান্ড ‘এল আর বি’ গঠন করেন। এল আর বি’র সাথে তিনি ২৭ বছর ধরে কাজ করেছেন। ‘এল আর বি ১ ও এল আর বি ২’ (বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম), ‘সুখ’, ‘তবুও’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘স্বপ্ন’, ‘আমাদের বিস্ময়’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নাই’, ‘স্পর্শ’, ও ‘যুদ্ধ’ সহ অসংখ্য অ্যালবামে তিনি গায়ক ও গিটারবাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন। ‘চলো বদলে যাই’ গানটি এল আর বি’র সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে একটি।

একক অ্যালবাম:

একজন একক শিল্পী হিসেবেও তিনি ‘রক্ত গোলাপ’ (১৯৮৬), ‘ময়না’ (১৯৮৮), ‘কষ্ট’ (১৯৯৫), ‘সময়’, ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’, ‘কাফেলা’, ‘প্রেম প্রেমের মতো’, ‘পথের গান’, ‘ভাটির টানে মাটির গানে’, ‘জীবন’, ‘সাউন্ড অফ সাইলেন্স’ (বাংলাদেশের প্রথম ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবাম), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’, ‘বলিনি কখনো’, ও ‘জীবনের গল্প’ অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। ‘কষ্ট’ অ্যালবামটি তার সবচেয়ে সফল অ্যালবাম হিসেবে বিবেচিত।

পুরষ্কার ও সম্মাননা:

তিনি এল আর বি’র সাথে ছয়টি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার এবং একটি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস জিতেছিলেন। ২০০৪ সালে ‘বাচসাস পুরস্কার’ (সেরা পুরুষ ভোকাল) ও ২০১৭ সালে ‘টেলে সিনে আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন:

১৯৯১ সালের ৩১শে জানুয়ারী তিনি ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে – মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব এবং ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব।

মৃত্যু:

ফুসফুসে পানি জমার অসুস্থতায় ভোগার পর ২০১৮ সালের ১৮ই অক্টোবর ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর দুই দিন আগে তিনি রংপুরে একটি কনসার্ট করেছিলেন। চট্টগ্রামের চৈতন্য গলি'তে তাকে দাফন করা হয়।

আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের রক সঙ্গীতের ইতিহাসে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন, এবং তার সঙ্গীত আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।

মূল তথ্যাবলী:

  • আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তী রক সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন।
  • তিনি ১৬ আগস্ট ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮ অক্টোবর ২০১৮ সালে মারা যান।
  • তিনি 'লিটল রিভার ব্যান্ড' (এল আর বি) ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
  • তিনি একজন প্রতিভাবান গিটারিস্ট, গায়ক এবং গীতিকার ছিলেন।
  • তার অনেক গান আজও জনপ্রিয়।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।