বাংলাদেশ বিমানবাহিনী

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী: স্বাধীনতার আকাশ রক্ষাকারী

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল আকাশ-যুদ্ধ শাখা। দেশের আকাশ সীমান্তের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, স্থল ও নৌবাহিনীকে বিমান সহায়তা প্রদান, দুর্যোগ মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা, এবং বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ - এসবই বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

মুক্তিযুদ্ধে অমোঘ অবদান:

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবদান অবিস্মরণীয়। যুদ্ধের আগেও পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অনেক বাঙালি কর্মকর্তা ও সদস্য স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেন। উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশার ও স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদুল্লাহ্ খান যথাক্রমে ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। আশরাফ, রউফ, লিয়াকত প্রমুখ জেড ফোর্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ডিমাপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়, যার প্রাথমিক জনবল ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষত্যাগী বাঙালি কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ। বদরুল আলম, এ কে খন্দকার, সুলতান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন সাত্তার, ক্যাপ্টেন সরফুদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের নেতৃত্বে গঠিত ‘কিলো ফ্লাইট’ একটি ডাকোটা, একটি টুইন অটার এবং একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার নিয়ে অসাধারণ সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে অভিযান পরিচালনা করে। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, ক্যাপ্টেন আকরামের নেতৃত্বে কিলো ফ্লাইট চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল ডিপো ধ্বংস করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমান বাহিনী পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতে বহু আক্রমণ চালায়, যার মধ্যে মৌলভীবাজারের পাকিস্তানি ব্যারাক হামলা উল্লেখযোগ্য।

গঠন ও উন্নয়ন:

৭ এপ্রিল ১৯৭২ সালে সরকারিভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান ফেরত কর্মকর্তা ও সদস্যদের যোগদানে বাহিনী দ্রুত শক্তিশালী হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মিগ-২১ বিমান এবং অন্যান্য সহায়তা পাওয়া গেলেও ১৯৭৭ সালের জাপান এয়ারলাইন্স হাইজ্যাকিং-এর পর বিদ্রোহের ফলে বিমান বাহিনী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে পাকিস্তানের সাথে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়, ফলে এফ-৬ যুদ্ধবিমান উপহার হিসেবে লাভ করে। ১৯৯৯ সালে রাশিয়া থেকে ক্রয় করা হয় মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিকে জাতীয় পতাকা এবং ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।

আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নামক আধুনিকায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এই পরিকল্পনার অধীনে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, কক্সবাজার, বঙ্গবন্ধু (ঢাকা), বরিশাল ও সিলেটে নতুন বিমান ঘাঁটি স্থাপন, এফ-৭বিজিআই, মিগ-২৯, সি-১৩০, কে-৮ প্রভৃতি আধুনিক বিমান ক্রয়, এমআই-১৭১এসএইচ, এডব্লিউ-১৩৯ হেলিকপ্টার সংযোজন, এফএম-৯০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ চলছে। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর প্রথমবারের মতো ৬৪ জন নারী বিমানসেনা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করে। বিমান বাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষতা - এসবই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নততর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশ সীমান্ত রক্ষার প্রাণপণে কাজ করে।
  • মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদান অসামান্য।
  • বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের মাধ্যমে দ্রুত শক্তিশালী হচ্ছে।
  • নারীরা এখন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
  • জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিমান বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ।

গণমাধ্যমে - বাংলাদেশ বিমানবাহিনী

বিজয় দিবস কাবাডির পুরুষ বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।

২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী বিজয় দিবস কাবাডিতে ‘খ’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।