বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল: লবণাক্ততা ও কৃষি উন্নয়ন

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলা, প্রকৃতির নানা রূপের সমাহার। এই অঞ্চলের সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়, যা কৃষকদের জীবিকা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যার সমাধানে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

ড. নিয়োগীর গবেষণা কেন্দ্রীভূত রয়েছে ‘রিলে পদ্ধতিতে’ গম ও মুগডাল চাষের উপর। এই পদ্ধতিতে আমন ধান কাটার আগেই, নভেম্বর মাসে, জমিতে গমের বীজ ছিটানো হয়। গম অল্প পানিতে ভালো ফল দেয় এবং কিছুটা লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এই প্রযুক্তি উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এবং কৃষকদের আয় বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। বরগুনার নলবুনিয়ায় কৃষকেরা ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতির সাফল্য দেখিয়েছেন। তাঁরা জানান যে, রিলে পদ্ধতিতে জমি চাষের খরচ কম এবং উৎপাদন বেশি হচ্ছে।

তবে, লবণাক্ততার পাশাপাশি সেচের জন্য উপযুক্ত পানির অভাবও একটি বড় সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকার ১১০০-১২০০ ফুট গভীরের পানি লবণাক্ততামুক্ত ও সেচযোগ্য। সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে এই পানি উত্তোলন করা সম্ভব, যা ফসল চাষের পাশাপাশি পানীয় জলের উৎস হিসেবেও কাজ করবে। এই পদ্ধতি কৃষকদের জীবনে আশার আলো দেখিয়ে দিচ্ছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে।
  • ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী ‘রিলে পদ্ধতি’তে গম চাষের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের চেষ্টা করছেন।
  • রিলে পদ্ধতি পানি ও অর্থ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।
  • গভীর থেকে লবণাক্ততামুক্ত পানি উত্তোলনের মাধ্যমে সেচের সমস্যা সমাধান সম্ভব।