ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশী রোগীদের সংকট
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আসা বাংলাদেশী রোগীদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন কারণে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের ভিসা নীতির পরিবর্তন এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা, বাংলাদেশী রোগীরা ভারতে চিকিৎসা পেতে ক্রমশ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ভিসা সমস্যা: ভারত সরকারের ভিসা নীতির পরিবর্তনের ফলে অনেক বাংলাদেশী রোগী দ্রুত ভিসা পেতে পারছেন না, এমনকি জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও। এর ফলে অনেকে তাদের চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারছেন না, ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ছে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে গেছে।
চিকিৎসাশিল্পে প্রভাব: এই পরিস্থিতির কারণে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন শিল্পও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই শিল্পের আনুমানিক মূল্য ছিল ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশ থেকেই ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আসত। কলকাতার নারায়না সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, তাঁদের হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা অন্তত ৫ শতাংশ কমেছে। অনেক হাসপাতালে বহির্বিভাগ ও রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে।
বিকল্প খোঁজ: অনেক বাংলাদেশী রোগী এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কের মতো দেশে চিকিৎসার বিকল্প খুঁজছে। কিন্তু এই দেশগুলোতে চিকিৎসার খরচ ভারতের তুলনায় অনেক বেশি, যা অনেকের পক্ষে অসাধ্য করে তুলেছে।
কূটনৈতিক উত্তেজনা: দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণেও এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতীয় ভিসা বিধিনিষেধের প্রতি কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং দুই সরকারকে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিকিৎসা সংস্থা ও চিকিৎসকদের মতামত: ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশী রোগীদের বয়কট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনা: কলকাতার কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এবং কিছু চিকিৎসক বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসা না করার ঘোষণা দিয়েছে, তবে অন্যান্য অনেক হাসপাতাল ও চিকিৎসক এর বিরোধিতা করেছেন।
উপসংহার: ভারতে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আসা বাংলাদেশী রোগীদের সংকট একটি জটিল সমস্যা, যার সমাধানের জন্য দুই দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে একত্রে কাজ করার প্রয়োজন। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে, উভয় দেশের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।