চট্টগ্রাম বন্দর: ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর হিসেবে পরিচিত। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রিকো-রোমান যুগের মানচিত্রেও চট্টগ্রাম বন্দরের উল্লেখ রয়েছে। নবম শতাব্দী থেকে আরব ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার করতেন। ১৬-১৭ শতকে পর্তুগিজরা এখানে বসতি স্থাপন করে। পর্তুগিজদের বিতাড়নের পর চট্টগ্রাম মুঘলদের অধীনে আসে। ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। ১৯২৬ সালে এটিকে মেজর পোর্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টে এবং ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে রূপান্তরিত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ভৌগোলিক অবস্থান:
চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ে অবস্থিত। বন্দরের সমুদ্র সীমা পতেঙ্গা সংকেত কেন্দ্র থেকে সাড়ে ৫ মাইল এবং কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে উজানে হালদা নদীর মোহনা অবধি ২৩ মাইল।
বন্দরের অবকাঠামো:
বন্দরে বর্তমানে ১৫টি স্থায়ী পাকা জেটি, ২টি পন্টুন জেটি, ৩টি বেসরকারি জেটি, ৮টি লাইটার জেটি, ১১টি মুরিং বার্থ এবং ১২টি মাল্টি পারপাস বার্থ (কন্টেইনার জেটি) রয়েছে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে বন্দরের আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২% এর বেশি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হয়। পাট, চা, তৈরি পোশাক, হিমায়িত মাছ, চিংড়ি ইত্যাদি প্রধান রপ্তানি পণ্য। খাদ্যশস্য, সিমেন্ট, পেট্রোলিয়াম, চিনি ইত্যাদি প্রধান আমদানি পণ্য।
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধের সময় বন্দরের অনেক কর্মচারী নিহত হন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত প্যাসিফিক ফ্লিট বন্দরে মাইন ক্লিয়ারিং ও উদ্ধার অভিযান চালায়।
বর্তমান উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ক্রমাগত উদ্যোগ নিচ্ছে। নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, ড্রেজিং, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্প ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে ট্রাক টার্মিনাল, আধুনিক হাসপাতাল, বহুতল মটর যান পার্কিং ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা আপনাকে পরবর্তীতে জানাব।