বজলুর রহমান: একজন অসাধারণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা
বজলুর রহমান (৩ আগস্ট ১৯৪১ - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন অনন্য সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্মরণীয়। তিনি শুধু সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদান রাখেননি, বরং দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১২ সালে তাঁকে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
বজলুর রহমানের জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার চরনিয়ামতপুর গ্রামে। তিনি শেরপুর জেলার গণবর্দী স্কুল থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক, ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে আইএ, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক জীবন:
১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক ও সাপ্তাহিক একতায়ও কাজ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ, ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, এবং নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা দাবিকে তিনি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন এবং তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করেন। তিনি বাসসের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং প্রেস ইনস্টিটিউট, প্রেস কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।
অন্যান্য অবদান:
বজলুর রহমান শুধু সাংবাদিকতাই করেননি; তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় সমাজকর্মী। তিনি ‘খেলাঘর’ নামক শিশুকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন এবং দৈনিক সংবাদ-এর ‘খেলাঘর’ পাতার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল: ১৯৭৪-১৯৮৭’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন।
মৃত্যু:
বজলুর রহমান ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
উত্তরাধিকার:
বজলুর রহমানের সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় যোগ করেছে। তার অবদান স্মরণীয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।