দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের রাজনৈতিক জীবন এবং অভিশংসনের ঘটনা
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের রাজনৈতিক জীবন বিতর্ক এবং উত্থান-পতনের এক অভিনব সমন্বয়। ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি বহু সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন, তার স্ত্রীর সাথে জড়িত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সামরিক আইন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টা পর্যন্ত।
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর ইউন সুক ইওলের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তার স্ত্রী, কিম কিওন হি, এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এবং এর প্রভাব পড়ে ইউনের রাজনৈতিক অবস্থানের উপর। এছাড়াও, শেয়ার বাজারের দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিযোগ তার প্রতি জনসাধারণের আস্থা কমিয়ে দেয়।
সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা ছিল গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টা। প্রেসিডেন্ট ইউন দাবি করেছিলেন যে তিনি 'রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি' দমন করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ এবং সমালোচনার জন্ম দেয়। পার্লামেন্ট দ্রুতই এই আদেশ বাতিল করে দেয় এবং ইউনের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৪ ডিসেম্বর, দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০৪ জন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে তিনি সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হন এবং প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তবে সাংবিধানিক আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে ইউনের প্রেসিডেন্ট পদ। আদালতের এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে ইউনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। যদি তার অভিশংসন বহাল থাকে, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইউন সুক ইওলের অভিশংসন এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শক্তি এবং দায়িত্ব ও জনগণের ব্যক্তিগত অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।