নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (১৮ জুলাই ১৯১৮ - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের ধারক ম্যান্ডেলা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (ANC) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ম্যান্ডেলা ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত থেম্বু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফোর্ট হেয়ার এবং উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়াশোনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি উপনিবেশ-বিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৩ সালে ANC-তে যোগ দিয়ে ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের (MK) নেতা হিসেবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে গ্রেফতার হয়ে অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান।
ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন, বেশিরভাগ সময় রবেন দ্বীপ, পলসমুর এবং ভিক্টর ভার্স্টার কারাগারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, রাষ্ট্রপতি এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তাকে মুক্তি দেন। মুক্তির পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সাথে বর্ণবাদ নিপাতের প্রচেষ্টায় আলোচনায় অংশ নেন। ফলে ১৯৯৪ সালে সর্ববর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ম্যান্ডেলা ANC-এর হয়ে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রপতি হন।
গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে ১৯৯০ সালে ভারতরত্ন এবং ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারও লাভ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাকে 'মাদিবা' (জাতির জনক) নামে ডাকা হত। তাঁর জন্ম হয় দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোতে। তার জীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বহু ঐতিহাসিক স্থান ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এই লেখাটিতে ম্যান্ডেলার জীবন ও সংগ্রামের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে তুলে ধরে।