দক্ষিণ আফ্রিকা: রংধনুর দেশের ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতি
আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র (Republic of South Africa) একটি অসাধারণ দেশ। ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের মিলনস্থলে অবস্থিত এই দেশটির উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০০ কিলোমিটার। উত্তরে নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক ও ইসোয়াতিনি (সোয়াজিল্যান্ড) এর সাথে এর সীমান্ত জুড়ে রয়েছে। লেসোথোকে পুরোপুরি ঘিরে রাখা এই দেশটির আয়তন প্রায় ১২,২১,০৩৭ বর্গকিলোমিটার। ৫ কোটি ৮০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার এই দেশটি বিশ্বের ২৪তম জনবহুল রাষ্ট্র।
তিনটি রাজধানী: প্রিটোরিয়া (নির্বাহী), কেপ টাউন (আইন বিভাগীয়) এবং ব্লুমফন্টেইন (বিচার বিভাগীয়) যা দক্ষিণ আফ্রিকার অনন্য বৈশিষ্ট্য। জোহানেসবার্গ, ডারবান ও পোর্ট এলিজাবেথ এর অন্যতম প্রধান নগরী। প্রশাসনিকভাবে নয়টি প্রদেশে বিভক্ত এই রাষ্ট্রে বহুদলীয় দ্বিকাক্ষিক আইনসভাবিশিষ্ট প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা প্রচলিত।
ভূগোল ও জলবায়ু:
দক্ষিণ আফ্রিকার ভূগোল মূলত তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত: অভ্যন্তরীণ মালভূমি, এস্কার্পমেন্ট পার্বত্য অঞ্চল এবং উপকূলীয় সমভূমি। পূর্বে ড্রাকেন্সবার্গ পর্বতশ্রেণী দেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালা। পশ্চিমে কালাহারি ও নামিব মরুভূমির একটা অংশ অবস্থিত। অরেঞ্জ ও লিম্পোপো দেশের প্রধান নদী। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ উপক্রান্তীয়, মাঝে মাঝে খরা দেখা দেয়। সোনা, হীরা, কয়লা, প্লাটিনাম ও ভ্যানাডিয়াম সমৃদ্ধ এই দেশের অর্থনীতি খনিজ সম্পদ নির্ভর।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি:
দেশটি বিক্ষিপ্ত বৃক্ষরাজি ও তৃণভূমি (ভেল্ড) দিয়ে আচ্ছাদিত। দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুল-ফলের গাছ প্রচুর। শুষ্ক অঞ্চলে ঝোপঝাড় ও গুল্ম জন্মায়। উপকূল ও পর্বত উপত্যকাগুলিতে সীমিত সংখ্যক অরণ্য আছে। সিংহ, হাতি, গণ্ডার, জলহস্তী, চিতাবাঘ এবং কৃষ্ণসার সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বন্যপ্রাণী উদ্যানে সুরক্ষিত আছে।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি:
দক্ষিণ আফ্রিকা নৃতাত্ত্বিকভাবে বহু-গোষ্ঠীয়। জনসংখ্যার চার-পঞ্চমাংশ কৃষ্ণাঙ্গ বান্টু বংশোদ্ভূত। জুলু, খোসা, সোথো, তসোয়ানা প্রধান নৃগোষ্ঠী। শ্বেতাঙ্গ (৮%), মিশ্র জাতি (৯%) ও এশীয় (২%) বাকি জনসংখ্যা গঠন করে। প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা আছে। আফ্রিকান্স (ওলন্দাজ উৎস), ইংরেজি, এবং আরও ১১ টি ভাষা সরকারি ভাষা। খ্রিস্টান ধর্ম প্রধান, এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান, হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম প্রচলিত।
অর্থনীতি:
দক্ষিণ আফ্রিকা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। মানব উন্নয়ন সূচকে ১১৩তম, আফ্রিকায় ৭ম। জিডিপি হিসেবে আফ্রিকার দ্বিতীয় ও বিশ্বের ৩৩তম। র্যান্ড এর মুদ্রা। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বেশী। ব্যাংকিং, পর্যটন, খনিজ উত্তোলন, শিল্প প্রধান খাত। সোনা, প্লাটিনাম, ক্রোমিয়াম, হীরা ও কয়লা এর বৃহৎ উৎপাদক।
ইতিহাস:
প্রস্তর যুগে সান ও খোয়েখোয়ে জনগোষ্ঠী এখানে বাস করত। ২ হাজার বছর আগে বান্টু জনগোষ্ঠী এসে সোনা ও তামার খনন ও বাণিজ্য শুরু করে। ১৫শ শতকের শেষে পর্তুগিজ উপনিবেশিকরণ শুরু হয়। ১৬৫২ সালে ওলন্দাজরা উত্তমাশা অন্তরীপে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৭৯৫ সালে ব্রিটিশরা এলাকা দখল করে। বুর যুদ্ধ (১৮৯৯-১৯০২) শেষে ব্রিটিশরা বিজয়ী হয়। ১৯১০ সালে ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা গঠিত হয়। আপার্টহাইট (১৯৪৮-১৯৯০) এর অবসানে নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন।
গুরুত্বপূর্ণ স্থান:
প্রিটোরিয়া, কেপ টাউন, ব্লুমফন্টেইন, জোহানেসবার্গ, ডারবান, পোর্ট এলিজাবেথ, ড্রাকেন্সবার্গ পর্বতশ্রেণী, কালাহারি মরুভূমি, নামিব মরুভূমি
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি:
নেলসন ম্যান্ডেলা, এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক