নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:৫৫ পিএম

নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সম্মিলন

নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা, ‘ভাটি বাংলার রাজধানী’ হিসেবে জনশ্রুত, একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনপদ। ২৪°৪৫´ থেকে ২৪°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৫´ থেকে ৯১°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এই উপজেলা উত্তরে বারহাট্টা উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলা, দক্ষিণে আটপাড়া, মদন ও খালিয়াজুড়ি উপজেলা, পূর্বে খালিয়াজুড়ি ও সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে আটপাড়া উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।

ঐতিহাসিক পরিচয়: মোহন সাহা নামে এক স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ধান, পাট, মাছ এবং সরিষার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র ছিল মোহনগঞ্জ। ১৯২০ সালের ৬ এপ্রিল মোহনগঞ্জ থানা এবং ১৯৮২ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯২৫ সালে মোহনগঞ্জ রেল স্টেশন নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯২৮ সালে রেল চলাচল শুরু হয়, যা এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে মোহনগঞ্জ থানা দখল করে নেয়। ৮ ডিসেম্বর ১৯ জন রাজাকারকে পাথরঘাটায় হত্যা করা হয়। মোহনগঞ্জ পৌরসভা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভৌগোলিক ও জনসংখ্যার তথ্য: মোহনগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ৩৩১টি গ্রাম রয়েছে। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১,৬৭,৫০৭ জন (পুরুষ ৮৪,২২৩ ও মহিলা ৮৩,২৮৪)। মুসলিম ৮৪.০৯%, হিন্দু ১৫.৮২%, খ্রিস্টান ০.০৫% এবং অন্যান্য ০.০৩%। শিক্ষার হার ৬৪.৭৩%।

অর্থনীতি: কৃষি (৪৭.৭৫%) মোহনগঞ্জের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস। ধান, পাট, সরিষা, তুলা প্রধান কৃষি ফসল। মাছ চাষও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে আছে আটামিল, স’মিল, রাইস মিল, তেলকল, আইস ফ্যাক্টরী, প্রিন্টিং প্রেস এবং ওয়েল্ডিং কারখানা। কুটিরশিল্প হিসেবে স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প ও কাঠের কাজ বিদ্যমান।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: মোহনগঞ্জে ৩টি কলেজ, ১৯টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, ৫টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১২টি মাদ্রাসা রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৭টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ২০১৪ সালে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম সিজারিয়ান অপারেশন চালু হয়।

যোগাযোগ: মোহনগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। ঢাকার সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। হাওড় এক্সপ্রেস এবং মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যস্থল এ উপজেলা। ৩৪.৩৪ কিলোমিটার পাকারাস্তা, ৩৭ কিলোমিটার আধা-পাকারাস্তা, ২১৭ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা, ৩ কিলোমিটার রেলপথ এবং ১২ নটিক্যাল মাইল নৌপথ বিদ্যমান।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মোহনগঞ্জে ২১৭টি মসজিদ, ৩২টি মন্দির এবং একটি গির্জা রয়েছে। মোহনগঞ্জ থানার শেখবাড়ী মসজিদটি সুলতানি আমলের ধর্মীয় অনুপ্রেরণার সাক্ষী। মোহনগঞ্জ বড় মসজিদ ও মোহনগঞ্জ মারকাজ মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

অন্যান্য তথ্য: মোহনগঞ্জের কংশ ও ধনু নদী বিদ্যমান, যার মধ্যে কংশ প্রায় মৃত। একসময় মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও বর্তমানে তার অনেকটা ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। পৌরসভায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে সম্ভাবনা রয়েছে। শিয়ালজানি খালের পুনঃখনন করা হয়েছে।

আশা করি এই তথ্যগুলো নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ধারণা দিতে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে আমরা এই লেখাটি আপডেট করে দেব।

মূল তথ্যাবলী:

  • মোহনগঞ্জ উপজেলা ‘ভাটি বাংলার রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত।
  • ব্রিটিশ আমলে ধান, পাট, মাছ ও সরিষার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র ছিল।
  • ১৯২০ সালে থানা, ১৯৮২ সালে উপজেলায় রূপান্তর।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কৃষি প্রধান অর্থনীতি, মাছ চাষও গুরুত্বপূর্ণ।
  • উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

রাগেবুল আহসান রিপুকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে র্যাব গ্রেফতার করে।

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় র্যাব রাগেবুল আহসান রিপুকে গ্রেফতার করে।