বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় অনিয়ম একটি গুরুতর সমস্যা। সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) -এর বিভিন্ন ধারায় নির্বাচনী অনিয়মের বিধান থাকলেও, বাস্তবে এর যথাযথ প্রয়োগ কমই হয়। বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির দ্বারা নানা ধরণের অনিয়ম সংঘটিত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ আইন: নির্বাচন পরিচালনার মূল আইন হলো আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ)। ১৯৭২ সালে প্রণীত এই আইনটিতে বারবার সংশোধনী আনা হয়েছে, সর্বশেষ ২০২৩ সালে। আরপিও'র ৭৩ থেকে ৯০ ধারায় নির্বাচনী অপরাধের জন্য বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা হলেও, বাস্তবে তেমন প্রয়োগ হয় না। ভোটার তালিকা, ইভিএম, সীমানা নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলাদা আইন আছে।
অনিয়মের রূপ: নির্বাচনী অনিয়মের অনেক রূপ আছে। যেমন, ভোট কারচুপি, জাল ভোট, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, প্রভাব বিস্তার, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, পুলিশের ভূমিকা, ব্যালট বাক্সে ছিদ্র করা, সিল মারার অনিয়ম, প্রার্থীর নিখোঁজ হওয়া, প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে অনিয়ম, রাজনৈতিক দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অপব্যবহার এবং গণমাধ্যম কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা: নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু অনেক সময় কমিশন আরপিও'র বিধান সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়। কখনও কমিশন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েও ব্যবস্থা নেয় না, আবার কখনও ব্যবস্থা নেয়ার পরও তা অমান্য করা হয় এবং অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে উপ-নির্বাচনে ব্যালটে সিল মারার দৃশ্য ভাইরাল হলে কমিশন কিছু কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচন: ২০১৮ সালের নির্বাচন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে কলঙ্কিত। প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার অনেক লোকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠলেও, আরপিও যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়নি।
গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন, ২০২৩: চলতি বছর সংসদে পাশ হওয়া এই আইন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, এই আইনের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। তবে কমিশন জুলাইয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নতুন আইনের কিছু দিক স্পষ্ট করেছে।
বিশ্লেষকদের মতামত: বিশ্লেষকরা মনে করেন, আরপিও সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতো। তারা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়।
উদাহরণ: গাইবান্ধায় একটি উপনির্বাচন বাতিল করার উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। তবে সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও, তিনি তা মানেননি, এবং কমিশন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।