নিয়াজ মোরশেদ: বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার
নিয়াজ মোরশেদ (জন্ম: ১৩ মে ১৯৬৬), যিনি মোর্শেদ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বিশিষ্ট দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার, গায়ক, কবি এবং প্রাক্তন আবাসন ব্যবসায়ী। দাবা ক্ষেত্রে তার অসাধারণ অবদান বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে সুস্পষ্টভাবে স্থান করে নিয়েছে।
প্রারম্ভিক জীবন ও দাবা জীবনের সূচনা:
ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী নিয়াজ মোরশেদ মঞ্জুর মোরশেদ এবং নাজমা আহমেদের সন্তান। নয় বছর বয়সে দাবা খেলা শুরু করেন। তার অগ্রজের সাহচর্য্য এবং প্রতিবেশী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জামিলুর রহমানের আন্তরিক সহযোগিতা তার দাবা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোটবেলায় তিনি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সাথেও দাবা খেলতেন। ১৯৮৩ সালে সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
দাবা ক্ষেত্রে অর্জন:
নিয়াজ মোরশেদের দাবা জীবন অসাধারণ সাফল্যে ভরা। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার এবং ১৯৮৭ সালে গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে তিনি প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৭৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি ছয় বার বাংলাদেশের জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন। ১৯৮৯ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন।
অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদান:
দাবার পাশাপাশি নিয়াজ মোরশেদ সঙ্গীত ও কবিতাচর্চায়ও সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তার একমাত্র সঙ্গীত অ্যালবাম 'অথচ একদিন' প্রকাশিত হয় এবং ২০০৯ সালে 'মাত্র এক কুড়ি' নামে কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত আবাসন ব্যবসায়ও জড়িত ছিলেন। চ্যানেল ২৪-এর 'চেস কিউব' অনুষ্ঠানেও তিনি কাজ করেছেন।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ১৯৭৮ সালে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশীপে যৌথভাবে প্রথম হলেও টাইব্রেকারে তৃতীয় স্থান অর্জন।
- ১৯৭৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত ৪ বছর একাধারে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
- ১৯৮১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপে যুগ্মভাবে প্রথম হলেও টাইব্রেকারে দ্বিতীয়।
- ১৯৮৭ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব লাভ।
- ২০০৩ সালে দাবা খেলায় পুনরায় মনোনিবেশ।
- ২০১২ এবং ২০১৯ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ জয়।
উপসংহার:
নিয়াজ মোরশেদ বাংলাদেশের দাবা ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। তাঁর জীবন ও কৃতিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।