নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত রূপগঞ্জ উপজেলা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং বর্তমান উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়। ১৭৬.৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলা শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরে কালীগঞ্জ (গাজীপুর) ও পলাশ উপজেলা, দক্ষিণে সোনারগাঁও, পূর্বে আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর এবং পশ্চিমে ঢাকার ডেমরা, খিলগাঁও, বাড্ডা ও খিলক্ষেত থানা রূপগঞ্জের সীমান্ত গঠন করে।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান:
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে রূপগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা ৫৩৪,৮৬৮; পুরুষ ২৭৯,৫৪৪ এবং মহিলা ২৫৫,৩২৪। মুসলিম ৫০৬,৪২৩, হিন্দু ২৮,১৭৯, বৌদ্ধ ৪০, খ্রিস্টান ১৬৪ এবং অন্যান্য ৬২।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
রূপগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। বজরা মসজিদ, মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ, গন্ধর্বপুর আটা আনি মসজিদ, গন্ধর্বপুর তারা মসজিদ, ব্রাহ্মণগাঁও জামে মসজিদ, গোলাকান্দাইল কলিম শাহ জামে মসজিদ, বাবা সালেহ মসজিদ ও মাযার - এসব স্থাপনা এ উপজেলার ঐতিহ্যের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর ব্যাপক অত্যাচারের শিকার হয় এ উপজেলা। ভোলাব নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর সংঘর্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, যার স্মরণে রূপসী কাঞ্চন সড়কের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ বকুল সড়ক’ রাখা হয়েছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
রূপগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি, শিল্প ও ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। রাইসমিল, ফ্লাওয়ার মিল, জুটমিল, কটনমিল, পেপারমিল, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, হোসিয়ারি শিল্প, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি এখানকার উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। শাকসবজি, হোসিয়ারি দ্রব্য সামগ্রী, মসলিন কাপড় এখানকার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার দিক থেকে রূপগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯০১), মুড়াপাড়া পাইলট হাইস্কুল (১৯০১), কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯) এখানকার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলায় হাসপাতাল, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, হেলথ কমপ্লেক্স, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
যোগাযোগ:
পাকা রাস্তা ১৭৬.৫৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪৮.৭৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮৮.৬৬ কিমি এবং নৌপথ ৪৩.৪৭ কিমি রূপগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে।
উন্নয়নের দিক:
রূপগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলার প্রায় সব ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। নলকূপ পানীয় জলের প্রধান উৎস। স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নেও কাজ চলছে। এনজিওসমূহেরও উন্নয়নমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক অপূর্ব সমন্বয়। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে এ উপজেলা আরও উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে।