নাথবাড়ি: ঐতিহ্যের ধারক কালীপূজা ও বহুমুখী পরিচয়
নাথবাড়ি নামটি বহু অর্থ বহন করে। একটি পরিবার, একটি বাড়ি, অথবা একটি নির্দিষ্ট স্থানের নাম হিসেবে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। প্রসঙ্গভেদে এর অর্থ পরিবর্তিত হয়। এই প্রবন্ধে আমরা নাথবাড়ির কালীপূজা ও এর সাথে জড়িত ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা:
উল্লেখযোগ্য নাথবাড়ি হলো টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাংড়া নাথবাড়ি। এখানে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে একটি ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা। এই পুজোতে মৃৎশিল্পী, পুরোহিত, ঢাকি সকলেই বংশপরম্পরায় জড়িত। পুজোর আগে গঙ্গা থেকে ন’ঘরা জল আনা, ভোগ তৈরি, সাতঘরা জল পুজোতে ব্যবহার - এসব প্রাচীন রীতিনীতি এখানে অক্ষুণ্ণ রয়েছে। জাঁকজমকপূর্ণ মা কালীর পুজোর পাশাপাশি বাস্তু মনসার পুজোও হয়। এই পারিবারিক কালীপূজা নাথবাড়ির সদস্যদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রায় ৭০ জন সদস্য সকাল থেকে প্রতিমা আনা, নাড়ু পাকানো, নৈবেদ্য সাজানো, বেলপাতার মালা গাথা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে। পুজোর দিন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীও যোগ দেন এই আরাধনায়।
শুরুর ইতিহাস:
অষ্টাদশ শতকে সারা বাংলায় মা কালীর আরাধনা প্রচলিত ছিল। মৌরি নাথবাড়িতে কালী আরাধনার শুরু হয়েছিল আরোগ্য লাভের আশায়। ডঃ শশীভূষণ নাথ তার দাদা হরিশচন্দ্র নাথের সুস্থতা কামনা করে মা সিদ্ধেশ্বরী কালীর পূজা শুরু করেছিলেন। হরিশচন্দ্রনাথ এই পূজার ফলে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। এই বছর নাথবাড়ির কালীপূজার ১৬১ তম বর্ষ।
প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা:
দুঃখজনক হলেও সত্য, নাথবাড়ির কালী মন্দিরেও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তাঙ্গাইলে কালিহাতী উপজেলায় অবস্থিত নাথবাড়ির এই মন্দিরে মহাদেব, জুগিনি, শীতলী, কালী ও ডাকিনী প্রতিমার মাথা কেটে ফেলা হয়। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক অবস্থা:
নাথবাড়ি এখনও এর ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা ধরে রেখেছে। তবে সময়ের সাথে সাথে এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে। এর বিস্তারিত তথ্য পেতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।