ধর্ষণ: এক অমানবিক অপরাধ
ধর্ষণ হলো এক ভয়াবহ যৌন নির্যাতন, যেখানে একজন ব্যক্তি অন্যের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার দেহে যৌন অনুপ্রবেশ ঘটায়। এটি শারীরিক বল প্রয়োগ, হুমকি, বা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে ঘটতে পারে। শুধুমাত্র যৌন মিলনই নয়, অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশও ধর্ষণের আওতায় পড়ে। অসচেতন, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী, অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনও ধর্ষণের অপরাধ।
ধর্ষণের পরিসংখ্যান:
ধর্ষণের পরিসংখ্যান বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজারবাইজানে প্রতি লক্ষ জনে ০.২ জন এবং বতসোয়ানায় প্রতি লক্ষ জনে ৯২.৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধী হলেন পুরুষ। পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা অপরিচিত ব্যক্তিদের চেয়ে অনেক বেশি। যুদ্ধের সময়, ধর্ষণ একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় (যুদ্ধকালীন যৌন নির্যাতন)।
ধর্ষণের প্রভাব:
ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাত-পরবর্তী চাপ বৈকল্য (PTSD), গর্ভধারণ, যৌন সংক্রামক রোগ, এবং গুরুতর শারীরিক আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা সামাজিকভাবেও বঞ্চিত হতে পারে।
ধর্ষণের সংজ্ঞা ও আইন:
ধর্ষণের সংজ্ঞা এবং আইনি প্রক্রিয়া বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ভিন্ন ভিন্ন। অনেক দেশে ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে, ২০১২ সালের পূর্বে ধর্ষণের সংজ্ঞা ছিল পুরুষ কর্তৃক নারীর ওপর বলপ্রয়োগ, কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়েছে, পুরুষ ও নারী উভয়ই ধর্ষণের শিকার ও অপরাধী হতে পারে।
ধর্ষণের কারণ:
ধর্ষণের কোনো একক কারণ নেই। রাগ, ক্ষমতা প্রদর্শন, যৌন তৃপ্তি, এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা ধর্ষণের কারণ হতে পারে। যুদ্ধ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায়, ক্ষমতা প্রদর্শন এবং দলীয় বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যৌন পাচার এবং সাইবার সেক্স পাচারের সাথেও ধর্ষণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
বাংলাদেশে ধর্ষণ:
বাংলাদেশে ধর্ষণ একটি ব্যাপক সমস্যা। ২০১৫ সালের ঢাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ষণ মামলায়, পুলিশের গড়িমসি ও অবহেলার বিরুদ্ধে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং ব্লাস্টসহ অন্যান্য সংগঠন হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। আদালত ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষেত্রে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে, যার মধ্যে দ্রুত অভিযোগ গ্রহণ, দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনএ টেস্ট উল্লেখযোগ্য।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা:
ধর্ষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনি ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ, এবং ভুক্তভোগীদের জন্য যথাযথ সহায়তা অপরিহার্য। ধর্ষণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও সহমর্মিতার মাধ্যমে এ অপরাধ প্রতিরোধ ও ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা সম্ভব।