দাবা: একটি বৌদ্ধিক খেলার ইতিহাস, জনপ্রিয়তা এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব
দাবা, ৬৪ বর্গক্ষেত্রের একটি ফলকে ১৬টি করে দুই দলের সৈনিক নিয়ে দুইজন খেলোয়াড়ের মধ্যে খেলা হয়। এই খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে বেশ কিছু মতবাদ আছে। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, দাবার উৎপত্তি ভারতে, আবার অন্যরা মনে করেন পারস্য বা চীনে। তবে ভারতীয় উপমহাদেশেই এই খেলার উৎপত্তির প্রমাণ বেশি। ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই ভারতে চতুরঙ্গ নামে এক ধরণের দাবা খেলা হতো বলে জানা যায়। কালক্রমে, এই খেলাটি পারস্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে এর নাম হয় 'শতরঞ্জ'। এরপর মুসলিমদের মাধ্যমে এটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ১৩ শতকে এটি পুরো পশ্চিম ইউরোপে জনপ্রিয় হয়। ইউরোপে এসে দাবার নিয়মকানুন কিছুটা পরিবর্তন হয় এবং এটি বর্তমান রূপে আসে।
আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থা গঠিত হয় এবং এর প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এই সংস্থার সদস্য। দাবা মূলত রাজার খেলা। এক রাজাকে 'কিস্তি' দিয়ে অন্য রাজাকে পরাজিত করাটাই খেলার লক্ষ্য। বাংলাদেশে দাবার ইতিহাসে ড. কাজী মোতাহার হোসেন অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯২৫ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া চেস ব্রিলিয়ান্সি কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯২৯ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি দাবার জগতে একাধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে অল পাকিস্তান ন্যাশনাল চেস ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ দাবা সংঘের (পরবর্তীতে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তাঁর স্মরণে, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন ১৯৮৫ সাল থেকে ড. কাজী মোতাহার হোসেন আন্তর্জাতিক মাস্টার্স চেস টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছে।
বাংলাদেশে নিয়াজ মোর্শেদ, জিয়াউর রহমান, রানী হামিদ প্রমুখ অনেক খ্যাতনামা দাবাড়ু আছেন। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় মহিলা দাবা প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৮৬ সালে নিয়াজ মোর্শেদ এশীয় জোন ৩.১ এর গ্র্যান্ড মাস্টার্স চ্যাম্পিয়নশীপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের একমাত্র গ্র্যান্ড মাস্টার হন। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের সদস্যপদ লাভ করে। প্রতিবছর জাতীয়, মহিলা, জুনিয়র, আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ও গ্র্যান্ড মাস্টার্স দাবা টুর্নামেন্টসহ অনেক দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক দাবা ক্লাবও রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাবা ক্লাবের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে এবং ‘উইন্টার চেস ফেস্টিভ্যাল’ নামে ৩ দিনব্যাপী দাবা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চেস চ্যাম্পিয়নশিপ এবং গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান মেমোরিয়াল ওপেন র্যাপিড চেস টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। আগারগাঁওয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দাবাড়ুদের জন্য একটি দুই দিনব্যাপী জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়।