দাদার

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:১৭ এএম

মুম্বইয়ের প্রাণকেন্দ্র দাদার: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

মুম্বইয়ের অন্যতম জনবহুল আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা দাদার, শুধুমাত্র একটি আধুনিক শহরের অংশ নয়, বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার এক অপরূপ মেলবন্ধন। ষোড়শ শতাব্দীতে, মুম্বইয়ের সাতটি দ্বীপের মধ্যে মহিম দ্বীপের নিম্ন অংশে অবস্থিত এলাকাটি ‘নিম্ন মহিম’ নামে পরিচিত ছিল। পর্তুগিজ আমলে এটি বোম্বাই দ্বীপের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ ছিল। পর্তুগিজ ফ্রান্সিসকানরা এখানে ‘নোসা সেনহোরা দে সালভাসো’ নামে একটি গির্জা তৈরি করেছিলেন, যা বর্তমানে ‘পর্তুগিজ চার্চ’ নামে পরিচিত এবং দাদারের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য।

১৮৯৯-১৯০০ সালে দাদার-মাতুঙ্গা-ওয়াডালা-সায়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে মুম্বইয়ের প্রথম পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে দাদারের যাত্রা শুরু হয়। ১৮৯০ এর দশকের প্লেগ মহামারীর পর বোম্বে ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট শহরের কেন্দ্রে জনাকীর্ণতা নিরসনে এ পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। এই পরিকল্পনার আওতায় দাদার-মাতুঙ্গায় ৬০,০০০ এবং সায়ন-মাতুঙ্গায় ৬০,০০০ লোকের বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

সিটি ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (সিআইটি) এর অধীনে দাদারে অনেক প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভিক্টোরিয়া জুবিলি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (বর্তমানে বীরমাতা জিজাবাই টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট) এবং কিং জর্জ স্কুল (বর্তমানে আইইএস-এর রাজা শিবাজি বিদ্যালয়)।

১৯৩৭ সালে রমনারাইন রুইয়া কলেজ এবং ১৯৩৯ সালে রামনিরঞ্জন পোদার কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দাদার আবাসিক এলাকা থেকে বিভিন্নতম পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। দুটি কলেজই এসপি মান্ডালি দ্বারা পরিচালিত। এছাড়াও, ব্রিটিশ ভারত আমলে প্রতিষ্ঠিত ডাঃ আন্তোনিও দা সিলভা উচ্চ বিদ্যালয় মুম্বইয়ের প্রাচীনতম স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম।

মুম্বইয়ের কটন মিলের যুগে বোম্বাই ডাইং (স্প্রিং মিলস), গোল্ড মোহুর মিলস, কোহিনুর মিলস, রুবি মিলস এবং টাটা মিলস-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিল দাদারে অবস্থিত ছিল। মুম্বইয়ের মিলগুলির পুনর্নবীকরণের সময় কিছু মিল পুনর্নবীকৃত হয়েছে, আবার কিছু মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

দাদারের গুরুত্ব বর্তমানে রেলপথের কারণে আরও বেড়েছে। পুরোনো চাউলগুলি উঁচু দালানে পরিণত হচ্ছে এবং দাদারের আকাশছোঁয়া উন্নয়ন চলছে। খোদাবাদ সার্কেল এবং এর আশেপাশের ভবনগুলি গ্রেড IIB এর ঐতিহ্যবাহী স্থান।

দাদার মুম্বই শহরতলির রেলওয়ে নেটওয়ার্কের পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় উভয় লাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল টার্মিনাস। পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় উভয় লাইনের একমাত্র সাধারণ স্টেশন হিসেবে এটি অনেক যাত্রীর জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট। দাদার মুম্বই মেট্রোর ৩ লাইন দিয়েও পরিষেবা প্রদান করবে।

দাদার পূর্ব পুনে, পানভেল এবং নভি মুম্বই থেকে আগত যাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র। দাদার জিপিওর পাশের বাস কেন্দ্র মুম্বইয়ের বাইরে থেকে আগত অনেক বাসের গন্তব্য।

দাদার দীর্ঘদিন ধরে মারাঠি সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। শিবাজী পার্ক, মুম্বইয়ের অন্যতম বৃহৎ পার্ক, দাদারে অবস্থিত। এখানে ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটার এই মাঠে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

দাদারে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান রয়েছে, যেমন- বিএপিএস স্বামীনারায়ণ মন্দির, রাস্তুম ফরোম্যানা আগিয়ারি, এন সি নারিয়েলওয়ালা দাদার আগিয়ারি, কালী মন্দির, গণেশ মন্দির, সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির, যখাদেবী মন্দির, পর্তুগিজ চার্চ, সেন্ট মেরিজ অর্থোডক্স ক্যাথিড্রাল ইত্যাদি।

চাইত্য ভূমি, ভারতীয় সংবিধানের প্রধান স্থপতি বি আর আম্বেদকরের স্মৃতিসৌধ, দাদারে অবস্থিত।

দাদারে কিছু বিখ্যাত স্কুল ও কলেজও অবস্থিত যেমন- ডাঃ আন্তোনিও দা সিলভা উচ্চ বিদ্যালয়, রমনারাইন রুইয়া কলেজ, রামনিরঞ্জন পোদার কলেজ, বীরমাতা জিজাবাই টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট ইত্যাদি।

এভাবেই, দাদার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব ধারণ করে মুম্বইয়ের অমূল্য সম্পদ হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • মুম্বইয়ের প্রথম পরিকল্পিত এলাকা
  • মারাঠি সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু
  • গুরুত্বপূর্ণ রেল ও বাস যোগাযোগ কেন্দ্র
  • ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও ধর্মীয় স্থানসমূহ
  • বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।