দক্ষিণ গোলার্ধ

দক্ষিণ গোলার্ধ: পৃথিবীর অর্ধেকের চিত্র

পৃথিবীর নিরক্ষরেখার দক্ষিণে অবস্থিত অর্ধাংশকে দক্ষিণ গোলার্ধ বলে। এটি ভৌগোলিক ও জলবায়ুগতভাবে উত্তর গোলার্ধ থেকে বেশ আলাদা। দক্ষিণ গোলার্ধে পাঁচটি মহাদেশের সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অংশ অবস্থিত: অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ, আফ্রিকার দক্ষিণাংশ এবং এশিয়ার কিছু দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ। এছাড়াও, ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশ দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত।

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:

দক্ষিণ গোলার্ধের ৮০.৯% জলরাশি দ্বারা আচ্ছাদিত, যা উত্তর গোলার্ধের তুলনায় অনেক বেশি। এই বিশাল জলরাশির কারণে দক্ষিণ গোলার্ধের জলবায়ু উত্তর গোলার্ধের তুলনায় কিছুটা মৃদু, অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত। পানি জমির তুলনায় ধীরে ধীরে উষ্ণ ও শীতল হয়, যা জলবায়ুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর অক্ষরেখার ঢালের কারণে দক্ষিণ গোলার্ধে ডিসেম্বর থেকে মার্চ গ্রীষ্মকাল এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর শীতকাল। ঘূর্ণিঝড় এবং ট্রপিক্যাল স্টর্ম এখানে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে।

জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:

দক্ষিণ গোলার্ধে ৮৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস করে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০-১২%। ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি দেশ এখানে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নত দেশের মধ্যে অন্যতম। অন্যদিকে, মোজাম্বিক এবং বুরুন্ডি মতো দেশ উন্নয়নশীল দেশ। সাও পাওলো, জাকার্তা, বুয়েনস আয়ার্স, সিডনি, কেপ টাউন ইত্যাদি দক্ষিণ গোলার্ধের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

ঐতিহাসিক তথ্য:

দক্ষিণ গোলার্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব উত্তর গোলার্ধের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তবে, বিভিন্ন সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গেছে। পেরুর নর্টে চিকো সভ্যতা ও ক্যাসমা-সেচিন সংস্কৃতি দক্ষিণ গোলার্ধের প্রাচীনতম সভ্যতার মধ্যে অন্যতম। বোগর, পশ্চিম জাভায় অবস্থিত দক্ষিণ গোলার্ধের প্রাচীনতম অবিচ্ছিন্নভাবে বসবাসযোগ্য শহর। ইস্টার দ্বীপ দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চল যেখানে মানুষ আগমনের আগেই বসতি স্থাপন করেছিল।

উল্লেখ্য:

দক্ষিণ গোলার্ধের বিশাল জলরাশি, বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি এবং সংস্কৃতি এটিকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • দক্ষিণ গোলার্ধ নিরক্ষরেখার দক্ষিণে অবস্থিত।
  • এখানে পাঁচটি মহাদেশের কিছু অংশ অবস্থিত।
  • দক্ষিণ গোলার্ধের অধিকাংশ জলরাশি।
  • গ্রীষ্মকাল ডিসেম্বর থেকে মার্চ এবং শীতকাল জুন থেকে সেপ্টেম্বর।
  • ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে।
  • অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড উন্নত দেশ।
  • বোগর দক্ষিণ গোলার্ধের প্রাচীনতম বসতি।