তরুণ মজুমদার: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমর নক্ষত্র
তরুণ মজুমদার (৮ জানুয়ারি ১৯৩১ - ৪ জুলাই ২০২২) একজন কিংবদন্তী ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর নাম জড়িয়ে আছে চারটি জাতীয় পুরস্কার, সাতটি বি.এফ.জে.এ. সম্মান, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং একটি আনন্দলোক পুরস্কারের সাথে। ১৯৯০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।
ব্রিটিশ ভারতের বগুড়ায় (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণকারী তরুণ মজুমদারের পিতা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কলকাতার সেন্ট পলস এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা শেষ করে তিনি চলচ্চিত্রের দিকে ধাবিত হন। তরুণ মজুমদার প্রথমে শচীন মুখার্জি ও দিলীপ মুখার্জির সাথে ‘যাত্রীক’ নামে একটি পরিচালক ত্রয়ী গঠন করেন। তাদের প্রথম ছবি ছিল ১৯৫৯ সালের ‘চাওয়া পাওয়া’, যেখানে উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনয় করেছিলেন। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত যাত্রীক নামে কাজ করার পর, প্রত্যেকে আলাদাভাবে পরিচালনার কাজ শুরু করেন।
তার একক পরিচালনায় নির্মিত ‘কাঁচের স্বর্গ’ (১৯৬২) ছবিটি তাঁকে প্রথম জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়। ‘পলাতক’ (১৯৬৩), ‘নিমন্ত্রণ’, ‘সংসার সীমান্তে’ (১৯৭৫), ‘গণদেবতা’ – এসব ছবি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। অন্যদিকে ‘বালিকা বধূ’ (১৯৬৭), ‘কুহেলী’ (১৯৭১), ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ (১৯৭৩), ‘ফুলেশ্বরী’ (১৯৭৪), ‘দাদার কীর্তি’ (১৯৮০), ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ (১৯৮৫), ‘পরশমণি’ (১৯৮৮) এবং ‘আপন আমার আপন’ (১৯৯০) ছবিগুলো বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পায়। ২০০৩ সালে তিনি ‘আলো’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেন যা বক্স অফিসে অসাধারণ সাফল্য লাভ করে।
তিনি সন্ধ্যা রায়কে বিয়ে করেন, যদিও পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। তরুণ মজুমদারের চলচ্চিত্রে অনেক নতুন প্রতিভাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমী চ্যাটার্জি, তাপস পাল, দেবশ্রী রায়, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় – এদের সকলেই তরুণ মজুমদারের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তরুণ মজুমদার বাংলা সাহিত্যের বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমল কর, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উপন্যাস ও গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্র সংগীতের ব্যবহারও বহুল প্রচলিত।
৯১ বছর বয়সে ২০২২ সালের ৪ জুলাই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যু বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে এনেছে।
তরুণ মজুমদার: বাংলা চলচ্চিত্রের অমিত্র নক্ষত্র