ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক): বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
১৯৪৬ সালের ১০ই জুলাই ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধারণ করে। এটি প্রতিষ্ঠার পূর্বে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবী উঠে আসছিল। ১৯৩৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল ব্রিটিশ সরকারের কাছে এ ব্যাপারে প্রস্তাব পেশ করে, যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা বিলম্বিত হয়। যুদ্ধোত্তর ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ঢাকা, করাচী ও মাদ্রাজে তিনটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ডাঃ মেজর ডব্লিউ জে ভারজিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালে ঢামেক যাত্রা শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ছাত্ররা ঢামেকে যোগদান করে। কলেজের প্রতিটি ব্যাচের নামের সাথে K সংযুক্ত থাকার পেছনে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। কিছু মত অনুসারে, K কলকাতার প্রতীক, আবার অন্য মতে, এটি ভারতীয় উপমহাদেশের একাদশ মেডিকেল কলেজ হিসেবে বর্ণমালার একাদশ বর্ণ K এর প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রাথমিক অবস্থায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও ধীরে ধীরে ঢামেক বিকশিত হয়। ১৯৫৫ সালে কলেজ ভবন নির্মিত হয়। বর্তমানে কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে, যেমন- কলেজ ভবন, অডিটোরিয়াম, পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র, ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল, বার্ন ইউনিট ইত্যাদি। প্রায় ২৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ রোগী চিকিৎসা পান।
১৯৭৫ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে কলেজ ও হাসপাতাল পৃথক করা হয়। কলেজ অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল পরিচালক দ্বারা পরিচালিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এমবিবিএস ও স্নাতকোত্তর (এমডি, এমএস, এম ফিল, ডিপ্লোমা) কোর্স পরিচালনা করে। বর্তমানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েট কার্যক্রম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সাথেও জড়িত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকের ছাত্র আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঢামেকের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ এ কলেজের সাথে জড়িত। ঢামেকের ইতিহাসে রয়েছে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রথম শহীদ মিনার স্থাপনের গৌরবোক্ত ঘটনা।
আজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার এক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান, যেখানে উচ্চমানের শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এর অবদান চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়নে অতুলনীয়।