ড্রেজিং: বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া
ড্রেজিং হলো জলের নিচ থেকে পলি, বালু, নুড়ি, এবং অন্যান্য পদার্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের মতো একটি নদীভরা দেশে, নদীর নাব্যতা বজায় রাখা এবং নৌপরিবহন সুগম করার জন্য ড্রেজিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ড্রেজিংয়ের ইতিহাস:
প্রাচীনকাল থেকেই নদী ও বন্দর খননের প্রচলন ছিলো। মিশরের নীল নদীর খনন কাজের উদাহরণ পাওয়া যায় প্রায় 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। আর মার্সেইয়ে তৃতীয় শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই ড্রেজিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। আধুনিক ড্রেজিং প্রযুক্তির উন্নয়ন বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ঘটে। সুয়েজ খাল ও পানামা খাল নির্মাণে ড্রেজিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
ড্রেজিং পদ্ধতি:
ড্রেজিং বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয়, যেমন:
- সাকশন ড্রেজিং: এই পদ্ধতিতে একটি শক্তিশালী পাম্পের সাহায্যে পলি ও পানি একসাথে শোষণ করা হয়।
- কাটার সাকশন ড্রেজিং: এই পদ্ধতিতে একটা কাটার ব্যবহার করে পলি শিথিল করা হয় তারপর সাকশন পদ্ধতিতে উত্তোলন করা হয়।
- গ্র্যাব ড্রেজিং: এই পদ্ধতিতে একটা গ্র্যাব ব্যবহার করে পলি উত্তোলন করা হয়।
- বাকেট ড্রেজিং: এই পদ্ধতিতে বাকেটের মাধ্যমে পলি উত্তোলন করা হয়।
ড্রেজিংয়ের সুবিধা:
- নদী ও বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি।
- নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
- উপকূল রক্ষা।
- ভূমি পুনরুদ্ধার।
- জলজ প্রাণীর আবাসস্থলের উন্নয়ন।
ড্রেজিংয়ের অসুবিধা:
- পরিবেশগত ক্ষতি:
ড্রেজিংয়ের ফলে জলজ প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, পানি দূষণ, এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
- অর্থনৈতিক ব্যয়:
ড্রেজিংয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য ব্যয় হয়।
বাংলাদেশে ড্রেজিংয়ের বর্তমান অবস্থা:
সরকার নদী নাব্যতা বৃদ্ধি এবং নৌপরিবহন সুগম করার জন্য ব্যাপক ড্রেজিং কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বিভিন্ন নদীতে ড্রেজিং চলছে এবং নতুন নতুন ড্রেজার কেনা হচ্ছে। তবে, ড্রেজিং কর্মসূচীর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা জোরালোভাবে অনুভূত হচ্ছে।
উপসংহার:
ড্রেজিং নদী ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, তবে এটি পরিবেশগত দিকগুলো দেখে সাবধানতার সাথে করা উচিত। স্বচ্ছতা এবং স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে উন্নত প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার প্রয়োজন।