টাঙ্গাইল সদর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। ২৪°১৫′০০″ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৫′০০″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ-এ অবস্থিত এই উপজেলা উত্তরে কালিহাতী, দক্ষিণে দেলদুয়ার ও নাগরপুর, পূর্বে বাসাইল এবং পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি ও চৌহালি উপজেলার সীমানা ভাগ করে নিয়েছে। ৩৩৪.২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫২১,১০৪ জন, যার মধ্যে পুরুষ ২৬০,১৭০ এবং মহিলা ২৬০,৯৩৪।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারী কাগমারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন, ‘কাগমারি সম্মেলন’ নামে ইতিহাসে স্মরণীয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রায় ১৭,০০০ মুক্তিযোদ্ধা এখানে যুদ্ধ করেছেন। এখানে একটি বধ্যভূমি এবং একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। সন্তোষ জমিদার বাড়ি, করটিয়া জমিদার বাড়ি, মাজার ও মসজিদ উপজেলার প্রাচীন নিদর্শন।
অর্থনৈতিক কার্যকলাপ:
উপজেলার অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ৩৬.৮১%। ধান, পাট, সরিষা, গম, আলু, আখ, চীনাবাদাম, ভুট্টা, এবং শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। তাঁত শিল্প, কাঁসা-তামা শিল্প, বিড়ি শিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য কুটির শিল্প। পোড়াবাড়ির বিখ্যাত চমচম মিষ্টি উপজেলার একটি গর্ব।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক:
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শিক্ষার হার ৫৩.১%। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই উপজেলাকে শিক্ষা-বান্ধব করে তুলেছে। দৈনিক দেশকথা, মফস্বল, মজলুমের কণ্ঠ সহ অনেক পত্র-পত্রিকা এখান থেকে প্রকাশিত হয়।
প্রশাসনিক বিভাগ:
টাঙ্গাইল সদর থানা ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৮৭ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে: করটিয়া, ঘারিন্দা, গালা, পোড়াবাড়ী, সিলিমপুর, কাকুয়া, কাতুলী, মগড়া, মাহামুদনগর, হুগড়া, দাইন্যা এবং বাঘিল।
উপসংহার:
ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলাকে বাংলাদেশের মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দান করেছে। এই উপজেলার উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সরকার ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।