জিয়া উদ্দিন: একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব
জিয়া উদ্দিন (জন্ম: ৪ এপ্রিল ১৯৪১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মহাপরিচালক এবং আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য। সিলেট অঞ্চলে তিনি ‘নাজিম সাহেব হুজুর’ নামে সমাদৃত। তার জীবনকাল ধর্মীয় আন্দোলন, রাজনীতি, শিক্ষা ও সমাজসেবায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পরিচিত।
- *প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:**
১৯৪১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কাকরদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুকাদ্দাস আলী কুরআনের হাফেজ ছিলেন। গ্রামের মক্তব ও পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর, মাথিউরা ঈদগাহ বাজার মাদ্রাসা, দারুল উলুম দেউলগ্রাম মাদ্রাসা, গাছবাড়ি জামিউল উলুম মাদ্রাসা এবং দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এবং পরবর্তীতে কুরআনের তাফসীরের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
- *কর্মজীবন ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ:**
১৯৬৭ সালে জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীমসহ বহু সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় আন্দোলন, যেমন: খতমে নবুয়ত আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন, তসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৩ সালের হেফাজত আন্দোলনের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
- *সমাজসেবা ও অবদান:**
শুধুমাত্র রাজনীতি ও আন্দোলনে নয়, জিয়া উদ্দিন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি বহু মাদ্রাসার পরিচালক ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে ‘মুফাক্কিরে ইসলাম’ উপাধি দেওয়া হয়।
- *পারিবারিক জীবন:**
তিনি একজন স্ত্রী, এক ছেলে ও ছয় মেয়ের পিতা।
জিয়া উদ্দিন বাংলাদেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃশ্যপটের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার জীবন ও কাজ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।