জামান শাহ দুররানি (ফার্সি: زمان شاہ درانی; ১৭৬৭ – ১৮৪৪) দুররানি সাম্রাজ্যের তৃতীয় শাসক ছিলেন (১৭৯৩-১৮০১)। তিনি ছিলেন আহমদ শাহ দুররানির নাতি এবং তিমুর শাহ দুররানির পঞ্চম পুত্র। জামান শাহের জন্ম বছর নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে; কিছু ঐতিহাসিক ১৭৬৭ সালকে জন্ম বছর হিসাবে উল্লেখ করেন, আবার অন্যরা ১৭৭০ সাল।
পিতার মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখলের জন্য জামান শাহকে তার ভাইদের বিরোধিতা করতে হয়েছিল। কাবুলে এক নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি শাসক নির্বাচিত হন, যেখানে বারাকজাই গোষ্ঠীর নেতা পায়েন্দা খানের সমর্থন তাকে জয়ী করে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর, জামান শাহ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইদের কাবুলে বন্দী করে রাখেন এবং এক কঠোর খাদ্যনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন।
জামান শাহ তার নিজের লোকদের দিয়ে একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং তার রাজত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তার বিরোধী প্রধানদেরকে মারাত্মক শাস্তি প্রদান করেন। কান্দাহার ও হেরাত দখলের চেষ্টা করার সময় তিনি তার ভাইদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং জয়ী হন।
তার শাসনামলে, জামান শাহ তার পিতার নীতিগুলিকে অত্যন্ত নরম মনে করে এবং এক নৃশংস শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনের সময় সাম্রাজ্যের বহিঃপ্রান্তে বিদ্রোহ শুরু হয়, এবং কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং সিন্ধু দুররানি সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হয়ে যায়।
জামান শাহ তার ভাই মাহমুদ শাহের সাথে একাধিক যুদ্ধ করেছেন, এবং এক সময় মাহমুদকে হেরাতের শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার ভারতে আক্রমণের উদ্যোগগুলিও আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং পারস্যের আক্রমণের কারণে ব্যর্থ হয়।
জামান শাহ তার রাজত্বের শেষের দিকে, বারাকজাই নেতাদের বিরুদ্ধে তার নিষ্ঠুরতার জন্য ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হন। বারাকজাইরা অবশেষে জামান শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তার ভাই মাহমুদ শাহের নেতৃত্বে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পরাজিত হয়ে জামান শাহ কাবুলে বন্দী হন এবং অন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে তিনি কাবুল থেকে পালিয়ে রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোরে আশ্রয় নেন। জামান শাহ ১৮৪৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর লুধিয়ানায় মারা যান এবং পাঞ্জাবের সিরহিন্দে সমাহিত হন।