জাপান ও ফ্রান্স

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম

জাপান ও ফ্রান্স: দুই দেশের সম্পর্ক ও বর্তমান পরিস্থিতি

জাপান ও ফ্রান্স, দুটি ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী দেশ হলেও, তাদের মধ্যে বর্তমানে কৌশলগত সহযোগিতার বিকাশ ঘটেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারীতে ফ্রান্স ও জাপানের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্যারিসে বৈঠক করেছিলেন। এটি ছিল তৃতীয়বারের মতো চার মন্ত্রীর যৌথ বৈঠক। এই বৈঠকে তারা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (যেমন, সাগরের মাইন দূর করার জন্য পানির নিচে কার্যক্ষম ড্রোন)। আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট) চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এটি দুই দেশকে প্রতিরক্ষা উপাদান ও সেবা বিনিময় করতে সহায়তা করবে। এই সহযোগিতা শান্তিরক্ষা, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।

জাপানের জন্য, এই সহযোগিতা একটি নতুন আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে: সামরিক ক্ষেত্রে মতাদর্শগতভাবে সমমনা দেশগুলির সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো। টোকিওর আঞ্চলিক পরিবেশ ক্রমশ অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ফ্রান্সের দৃষ্টিতে, ইউরোপীয় দেশগুলি যদি নিরাপত্তার দিক থেকে সক্রিয় দেশগুলির সাথে সহযোগিতা বাড়াতে চায়, তাহলে সংহত ঐক্য গড়ে তুলতে ধারণা ও প্রত্যাশার পার্থক্য কমানোর জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন।

জাপান ও ফ্রান্সের ভৌগোলিক দূরত্ব অনেক বেশি হলেও, উভয়ের অভিন্ন স্বার্থের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এগুলির মধ্যে রয়েছে উদার মূল্যবোধ, আইনের শাসন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ (চীন ও রাশিয়ার ক্রিয়াকলাপ), পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং জলদস্যুতা। তবে, উভয় দেশেরই নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে। জাপানের প্রধান লক্ষ্য হল ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ যেন পূর্ব এশিয়ায় চীনের সমুদ্র বিস্তারের বিষয়ে টোকিওর মতামত গ্রহণ করে।

ফ্রান্সের এশীয় নীতি দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে। প্যারিস এই অঞ্চলে দায়িত্বশীল অংশীজন হতে চায়। ফ্রান্স এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী হিসেবে এশীয় দেশগুলির নিরাপত্তা বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটিকে শান্তিকামী ধারা থেকে বের করে আনার কাজ শুরু করেছেন, ফ্রান্সের নিরাপত্তা বাহিনী বুঝতে পেরেছে, জাপান শিগগিরই তাদের এক স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা মিত্র হতে যাচ্ছে।

উভয় দেশই ভারত মহাসাগর ও আফ্রিকা পর্যন্ত নিরাপত্তা সহযোগিতা বিস্তৃত করার সম্ভাবনা দেখছে। ২০১৫ সালে আফ্রিকার জন্য যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে নিরাপত্তা সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জাপান আফ্রিকার নিরাপত্তা পরিবেশে ফ্রান্সের জ্ঞান থেকে উপকৃত হতে পারে। ফ্রান্স জাপানের আর্থিক সহযোগিতা পেতে পারে সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।

তবে, সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ অবশিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হুমকি সংক্রান্ত ধারণাগত পার্থক্য, বিশেষ করে রাশিয়া সম্পর্কে। জাপান রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যা ফ্রান্সের দৃষ্টিতে ভিন্ন। জাপান চায় পূর্ব এশিয়ায় ফ্রান্সের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। প্যারিস মনে করে জাপান আফ্রিকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দৃষ্টিগ্রাহ্য অবদান রাখার অঙ্গীকার সত্যিকারের শক্তিশালী নয়।

উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জাপানের কাছে ইউরোপীয় দেশের সাথে সম্পর্ক নবায়ন করা একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মৈত্রী বজায় রাখা, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র পিছুটান দিলে তার প্রতিস্থাপন নিশ্চিত করা।

এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও, ফ্রান্স-জাপান সম্পর্কের বড় কোন সংঘর্ষের সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সম্পর্কের উচ্চাভিলাষ মহাকাশভিত্তিক সাগরের নজরদারি ও সাইবার স্পেসে দেখা যায়। কৌশলগত অংশীদারিত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। তবে, উদার মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী সহযোগিতা গড়ে তুলতে হলে জাপান ও ফ্রান্স উভয় দেশকেই গণতন্ত্রের বর্তমান সংকটে নজর দিতে হবে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি পুনরুদ্ধারে পথ খুঁজতে হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ফ্রান্স ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার বিকাশ ঘটেছে।
  • প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে দুই দেশ অগ্রসর হচ্ছে।
  • আকসা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা উপাদান ও সেবা বিনিময় হবে।
  • চীন ও রাশিয়ার ক্রিয়াকলাপ মোকাবেলায় দুই দেশের স্বার্থ এক।
  • দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - জাপান ও ফ্রান্স

৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:০০ এএম

জাপান ও ফ্রান্সেও যাবেন ব্লিঙ্কেন।